Apan Desh | আপন দেশ

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর উদ্যোগ রাবি প্রশাসনের

রাবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ২৯ জুন ২০২৫

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর উদ্যোগ রাবি প্রশাসনের

ছবি : আপন দেশ

প্রায় ১৭ হাজার দুর্লভ প্রত্ননিদর্শনসমৃদ্ধ ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর পরিচালনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ না থাকায় গবেষণার অভাবে দেশের প্রথম জাদুঘর প্রত্নসম্পদ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ বাস্তবতায় বরেন্দ্র অঞ্চলের সমৃদ্ধ প্রত্ন ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে নীতিগত সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং খুব শিগগিরই ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের নতুন পরিচালক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ উদ্যোগের কথা জানান। তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজশাহীতেই প্রথম হওয়া উচিত ছিল, কারণ উত্তরবঙ্গে যেভাবে আর্টিফ্যাক্ট পাওয়া যাচ্ছে, এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—এতো বড় মিউজিয়াম তো আর কোথাও নেই। আমরা আশা করছি দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তখন একটি বিভাগ আলাদাভাবে গবেষণা থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে পারবে।

এদিকে ১৯৯২ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যাত্রা শুরু করে। ২০১৩ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও খোলা হয় বিভাগটি। এছাড়া ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ‘ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব’ নামে বিভাগ রয়েছে।

এদিকে গবেষণা, সংরক্ষণে এবং উচ্চশিক্ষার এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি রাজশাহীতে অবস্থিত অথচ এটিকে ঘিরে গবেষণার জন্য কোনো স্বতন্ত্র বিভাগ ছিল না—এটি দুঃখজনক। প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এ বিভাগ চালু হলে প্রত্নসম্পদ গবেষণা, সংরক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর আছে এবং এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মিউজিয়াম এটি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে কোনো আর্কিওলজি বিভাগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি লক্ষ্য করি জাবি, বেরোবিসহ কুবিতে এ বিভাগগুলো রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে এবং আমাদের বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের পাশে একটা জমি আছে যেখানে আমরা উদ্যোগ নিলে মনে করি এটা সম্ভব।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, বাংলার প্রথম জাদুঘর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব, ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালু করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বসহ চিন্তা করছি। আমাদের নীতিগত সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, পাশাপাশি, জাদুঘরের নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের কাজ চলছে। এসব প্রস্তুতি শেষ হলে ইউজিসির অনুমতি নিয়ে খুব শিগগিরই বিভাগ খোলার চেষ্টা করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, গবেষণাভিত্তিক একটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এটি সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া, তবুও আমরা আশাবাদী। উত্তরবঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব গবেষণার জন্য এটি একটি উপযুক্ত স্থান। একটি সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজশাহীতে অবশ্যই এই বিভাগ থাকা উচিত। আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চালু হওয়া স্বতন্ত্র বিভাগ হলো ‘ফারসি ভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগ। এটি ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করে।

আপন দেশ/জেডআই 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়