Apan Desh | আপন দেশ

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা

ফাইল ছবি

নতুন উচ্চতায় উঠেছে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমান। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে, খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত সেপ্টেম্বর শেষে মোট শ্রেণীকৃত ঋণের অংক ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। যা গত জুন শেষে ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। 

আরও পড়ুন<<>>ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

আর সংরক্ষিত প্রভিশনের অংক ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এ সময় ঋণের সুদ স্থগিত করা হয়েছে ৯৮ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন—১৬ বছর ধরে চলা দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক প্রভাব, অসৎ ব্যবসায়ীদের অপকৌশল এবং ঋণ পুনঃতফসিলে অনিয়ম পুরো খাতটিকে অকার্যকর করে তুলেছে। এছাড়া গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকটি বড় গ্রুপ হঠাৎ করে ঋণ পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানো বা সময়ক্ষেপণের কৌশল নেয়। যা এনপিএলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, শুধু খেলাপি নয়—রাইট-অফ, পুনঃতফসিল, স্থগিত এবং আদালত-আটকে থাকা ঋণ মিলিয়ে ‘ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট’ শিগগিরই ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শুধু ঝুঁকির মুখে ফেলেই দিচ্ছে না, বরং সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

গত বছরের জুন মাসের শেষে— রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি: ১,৫২,৭৫৫ কোটি টাকা। মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এত বড় পরিমাণ খেলাপি শুধু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক শক্তিকেই দুর্বল করছে না, বরং জনগণের আমানত সুরক্ষার প্রশ্নও সামনে নিয়ে আসছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চিত্রও খুব ভালো নয়। খেলাপি ঋণ: ৪,২৫,৬৬০ কোটি টাকা। এনপিএল হার: ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর বড় অংশই কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী— বিশেষত এস আলম গ্রুপ ও বেক্সিমকো-সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীভূত।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েকটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে খেলাপির হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং পূর্ববর্তী রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছায়া থাকা অবস্থায় অনিয়মের মাত্রা বেশি ছিল।

ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. ওমর ফারুক খান জানান, আমরা আন্তর্জাতিক আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদেশি সম্পদ পুনরুদ্ধারে চুক্তি করছি। মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতি কমানো এবং নগদ আদায় বাড়ানো। তিনি আশা করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে তাদের ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশ থেকে কমে ৩৫ শতাংশে নামানো সম্ভব হতে পারে। তবে তিনি এটাও মানছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ধীর হওয়ায় ঋণ পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে।

আপন দেশ/এসআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়