Apan Desh | আপন দেশ

‘মার্কিন শুল্ক বাড়লে বন্ধ হতে পারে অনেক পোশাক কারখানা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৮ জুলাই ২০২৫

‘মার্কিন শুল্ক বাড়লে বন্ধ হতে পারে অনেক পোশাক কারখানা’

প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পোশাকের ওপর ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বসালে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। বর্তমানে মার্কিন বাজারে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন ৩৫ শতাংশ যোগ হলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ।

মাহমুদ হাসান বলেন, এ হার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় ঝুঁকি। এত বেশি শুল্ক দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হবে। এ বিষয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে। ১ আগস্টের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা আছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক দিলে শুধু শুল্ক বাবদ ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি।

বিজিএমইএ সভাপতির আশঙ্কা, অতিরিক্ত শুল্ক দিলে আমদানিকারকরা অন্য দেশে চলে যাবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে ২০ শতাংশ শুল্কে পণ্য আমদানির চুক্তি হয়েছে। আমাদের তুলনায় ভিয়েতনাম ও ভারতের খরচ কম। ফলে তারা মার্কেট দখল করে নিতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো। তারা হয়তো টিকতেই পারবে না। তিনি সরকারের প্রতি আহাবন জানিয়ে বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কূটনৈতিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

মার্কিন শুল্ক না কমলে বাংলাদেশের রফতানিতে যে প্রভাব পড়তে পারে

নতুন শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। যা আগে ছিল ১৫ শতাংশ। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে গতবছর রফতানি হয়েছে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ শুল্ক বাংলাদেশের রফতানি খাতের জন্য ভয়াবহ। বিশেষ করে প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামকে ২০ শতাংশ, পাকিস্তানকে ২৯ শতাংশ ও  ভারত, চীনকে তুলনামূলক কম শুল্কে রাখা হয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।

সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ৯ জুলাই ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও বাণিজ্য সচিবের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ওয়ান-টু-ওয়ান আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা এ সিদ্ধান্তকে "রপ্তানিখাতের জন্য মারাত্মক হুমকি" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার—২০২৪ সালে সেখানে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। যা মোট পোশাক রফতানির প্রায় ১৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ভিয়েতনাম মাত্র ২০ শতাংশ শুল্ক দিচ্ছে। পাকিস্তানের শুল্ক মাত্র ২৯ শতাংশ। আমাদের ৫০ শতাংশ দিতে হলে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না। এ পরিস্থিতি তৈরি পোশাক রফতানিতে বড় ধাক্কা দেবে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির মনে করেন, ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই চুক্তি করে রেখেছে। তাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো। আমরা এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছি, কিন্তু সময় কম। এখন দ্রুত ফল দিতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আশার কথা শোনাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (USTR) সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ওয়ান টু ওয়ান আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার। এ পরিস্থিতিতে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক যৌক্তিক নয়। এখনো সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি।

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, আমাদের শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এখন সময়ের দাবি।

বর্তমানে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাজার। তাই এ শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে শুধু পোশাক নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক রফতানি খাতেই ধস নামতে পারে, বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়