Apan Desh | আপন দেশ

হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ৮ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২০:৫১, ৮ জুলাই ২০২৫

হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা 

ছবি: আপন দেশ

হাওর সুরক্ষায় এক পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হাওরে বাধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পর্যটন সুরক্ষা ও নীতিমালা প্রণয়নসহ চারটি প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি'র শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এর উদ্যোগে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেছেন সংগঠনের সভাপতি রফিক মুহাম্মদ। সেমিনারে কি-নোট উপস্থাপন করেছেন সংগঠনের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ মোফাজ্জল।

উপদেষ্টা বলেন, হাওরের ইকো সিস্টেম পৃথিবীতেই বিরল। এটিকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরের সীমানা নির্ধারণ করে কৃষি-জমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আপনারা যারা এ সেমিনারে রয়েছেন আপনারা দীর্ঘকাল ধরে হাওরের চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে আসছেন। আসলে সমস্যা চতুর পাশে ভরা। আমিও হাওরের মানুষ, হবিগঞ্জের। তাই হাওর নিয়ে যখন কেউ কথা বলেন তখন আমার আবেগে একটা নাড়া দেয়। হাওর যারা দেখেননি; আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম যখন এ দায়িত্বে আসিনি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে আবারও পড়াবো।

তিনি বলেন, হাওর মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। মহাপরিকল্পনাটা হালনাগাদ করা হয়েছে। হাওর এলাকার মানুষের মতামতটা এখানে প্রতিফলিত হবে ও হাওরগুলোর সীমানা চিহ্নিত করার একটা বিধান রাখা হবে।

আরও পড়ুন>>>রাজধানীর ৪ স্থানে সভা-সমাবেশে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা

হাওরে কখন বাঁধ নির্মাণ করা হবে, কীভাবে স্থানীয় উপকারভোগী নির্ধারণ করা হবে। আর কাদেরকে বাঁধ নির্মাণের কাজে যোগ করানো হবে- সে সংক্রান্ত নির্দেশিকাও সংশোধন করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।

রিজওয়ানা বলেন, কালনার হাওর, খরচার হাওর ও কালিয়াকোটা হাওরসহ পাঁচ হাওরে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ এখানে গাছের সংখ্যা অনেক কম। এর বাইরেও যদি কোনো কোনো হাওর নেয়া যায় সেটা আপনারা আমাকে জানাতে পারেন।…আমি গাছ লাগিয়ে দেই, তারপর ৯০ ভাগ মানুষ জ্বালানির জন্য কেটে নেয়, তাহলে তো কোন কাজের কথা হল না, সেখানে আমাদেরকে একটা মনিটরিং প্ল্যানে আসতে হবে।

হাওরের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সুরক্ষা আদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আশা করি এটা চূড়ান্ত করব। সেখানে আমরা বলে দেব, পর্যটকরা কী করতে পারবেন, কী পারবেন না। এগুলোর ক্ষেত্রে পর্যটকদের সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, হাওরের সীমানা নির্ধারণেও ভিন্নতা রয়েছে। কিছু পুকুর কিছু খাল কিছু নদী বাকী হচ্ছে ধানি জমি। সেগুলো হচ্ছে মানুষের নামে রেকর্ডকৃত। ফলে অনেক মানুষ এ হাওরের মালিকানায় সম্পৃক্ত থাকায় হাওর ব্যবস্থাপনায় কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য হাওরের একটা মাস্টারপ্ল্যান নির্ধারণে আমরা একটা দেশব্যাপী কর্মশালা করেছি, কর্মশালায় যে অভিমতগুলো পাওয়া গেছে সে অভিমতগুলো এ মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধনও করা হয়েছে। এরপর আমরা ওয়েবসাইটে দিবো।

‘দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাঁধ নির্মাণটা কীভাবে করা হবে, কীভাবে স্থানীয় উপকারগুলো টিক করা হবে। কাদেরকে সেই কাজে অংশগ্রহণ করাতে হবে। আপনারা প্রায় সময় রিপোর্ট করেন যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হয় না। এ বিষয়ে সরকারের যে নীতি-গাইড লাইন রয়েছে সেটাকে ভুল বলবো না; তবে বলবো- কেন শুরু করলো না। হাওরের পানি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নামে না তাহলে কেমন করে কাজ হবে? মূলত ১৫ অক্টোবর বলা হয়েছে এই জন্য যে কোনো সময় যদি আগে পানি নেমে যায় তাহলে কাজটা যেন বিলম্ব না হয়। আগে পত্রিকায় দেখতাম কাজ শুরু হয়নি। এবার নিজে দায়িত্ব নিয়ে বাস্তবতা দেখলাম- আসে সে সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব না। কারণ হচ্ছে ঐখানে পানি এখনো নামেনি।

হাওরের যখন বাঁধ নির্মাণ করা হয় সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকে না মন্তব্য করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কারণ হচ্ছে যাকে কাজে অন্তর্ভুক্ত না করা হয় অনেক সময় সে জমি দিতে রাজি হয় না। তাছাড়া আমাদের সবকিছুতেই একটা রাজনীতি আছে। কাজেই সেখানে আমরা একটা সংশোধনী এনে সত্যিকার অর্থেই যাদের কাজের বিনিময়ে টাকা পাওয়া উচিত তারাই যেন অংশগ্রহণ করতে পারে। সেটা ৫০/৫০ হবে নাকি ৭০/৩০ হবে সেটা আমরা এখন চিন্তা করছি। হাওরের বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরেকটা অন্তরায় হচ্ছে মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। 

হাওরের বৃক্ষরোপণের গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমি নিজেই কিন্তু হালকালুকি হাওর নিয়ে মামলা করেছি। লক্ষাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে; তখন বেলায় কাজে ছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত গাছ লাগিয়ে ছিলেন তখন তারা বলত ফাইলটা আমাদের এ অফিসে নাই হেড অফিসে আছে। সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছি কোন কোন হাওরের বৃক্ষরোপণ সম্ভব, সেটার একটা তালিকাও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু আজকে সেমিনারে বৃক্ষরোপণ নিয়ে যে তথ্য পেলাম তাতে আমার মনে হয় শুধু গাছ লাগালেই হবে না সেখানে একটা মনিটরিং ব্যবস্থাও লাগবে।

‘হাওর ট্যুরিজম তো অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা ছিল না। স্থানীয় পর্যায়ে তো প্রশাসন কাজ করে। হাওর অধিদফতরের যিনি ডিজি আছেন তাকে আমি পাঠিয়ে ছিলাম। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আমরা হাওরের পর্যটন নিয়ন্ত্রণের সুরক্ষার খসড়া প্রস্তুত করছি। কেননা হাওরে পর্যটন বোট কয়টা যাবে কয়টা যাবে না সেটাও একটা বিষয়। সবকিছুই সরকার করে না, সরকার করে না এটা বুঝলাম। সরকার করে দিল কিন্তু পর্যটক যদি হাওরের যাওয়ার সময় আওয়াজ সৃষ্টি করে গান বাজনায়; তখন সরকারের পক্ষে কি ২০ হাজার ৫০ হাজার মানুষকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব হবে। পানি নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। ২০১৩ সালের আইন কিন্তু এখন ২০২৫ সাল।’

তিনি বলেন, যখন আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটন নিয়ে কথা বললাম; সেখানে দেখা জাহাজে উঠার সময় এই সাউন্ড যন্ত্রাংশ নিয়ে যায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে শব্দ করে বারবিকিউ পার্টি করে। এগুলোর ক্ষেত্রে মূলত পর্যটকদের সতর্ক হতে হবে। প্রকৃতিকে দেখার জন্য ট্যুরিজম এখানে তো গান শোনা বারবিকিউ পার্টি করার জন্য ট্যিরিজম না। ফলে এটা নিয়ন্ত্রণ না, এটা ইকো ট্যুরিজমের প্রসার। তাই আমাদের এমন একটা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে হবে যে কয়েকটা স্থান থেকে পর্যটকরা উঠে সেইখানে একটা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে পারি। সেখানে মনিটরিং বাড়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভলানটিয়ার রাখা হবে; যারা সচেতনতামূলক বার্তা পৌছে দিবে।

সঞ্চালনা করেছেন নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এর সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী খান লিথোর সঞ্চালনায় বক্তব্যে রাখেন জাতিসংঘের সাবেক পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ, ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. মাহবুব হাসান শাহীন, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত দায়িত্বে) হাবিবুর রহমান, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তাহমিনা খানম, বেসরকারি টেলিভিশন আর টিভির বার্তা প্রধান ইলয়িাস হোসাইন, কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এর সভাপতি এরফানুল হক নাহিদ। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস সেলিম, দিলীপ সরকারসহ আয়োজক সংগঠনের প্রায় শতাধিক সাংবাদিক। এছাড়াও সেমিনারে অংশ নেন বিভিন্ন স্তরের সাংবাদিক, গবেষক, উন্নয়নকর্মী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়