
প্রতীকী ছবি
মন্ত্রণালয়ের সম্মতি মিললেও নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন। আটকে আছে লভ্যাংশ ঘোষণাও। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ১৮টি ব্যাংক এখনও ২০২৪ হিসাব বছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা এসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণাও করতে পারছে না। যার প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে ‘অস্বস্তিকর পরিস্থিতি’।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সম্মতি দিয়েছে। এখন প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)। যা গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিদেশ সফর থেকে ফেরার পর দেয়া হতে পারে।
গভর্নর ১২ মে পর্যন্ত অফিস করে দুই দিনের সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছেন। ১৩ ও ১৪ মে তিনি দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক সুকুক ফোরামে অংশ নিচ্ছেন। সেখানে বাংলাদেশের বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট সীমা বাড়ানো নিয়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকও রয়েছে তার। ওই সফরে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরাও গেছেন।
বিষয়টিকে ‘বিনিয়োগবান্ধব নয়’ ও ‘বাজারকে অস্থিতিশীলকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
আরও পড়ুন>>>ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
তিনি বলেন, এমনিতেই বাজার চাপের মুখে রয়েছে। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণা না আসা সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। মে মাসে সাধারণত ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড ঘোষণা হয়। বিনিয়োগকারীরাও এ সময়ের দিকেই তাকিয়ে থাকেন।
সাইফুল ইসলাম আরও জানান, ডিএসইর মাধ্যমে তারা এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করবেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছিল। সে রেফারেন্স বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো সময় চাওয়ায় মন্ত্রণালয় মে মাস পর্যন্ত ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ মে এক সার্কুলারে জানিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ১২১ ধারা অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ৪০ ধারার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তফসিলি ব্যাংকসমূহের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা ৩১ মে ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তবে এখনো আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত বা লভ্যাংশ ঘোষণা হয়নি ১৮ ব্যাংকের।
যেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে- রূপালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, আইএফআইসি, আল আরাফাহ ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এক্সিম, সাউথ ইস্ট, সোশ্যাল ইসলামী, এনআরবিসি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, মার্কেন্টাইল, এনআরবি, এবি ব্যাংক, ইউসিবি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংক এখনো বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেনি। কারণ তাদের বিশেষ নিরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ফরিদউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অডিট শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিবেদন আটকে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণে ঘাটতি। অনেক ব্যাংকই ধাপে ধাপে প্রভিশন রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে। ফলে বিষয়টি গভর্নরের সিদ্ধান্তে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকারদের যুক্তি, অতীতে কখনো এত খোলামেলাভাবে খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ হয়নি। ২০২৪ সালে প্রথমবার খেলাপির প্রকৃত চিত্র উঠে আসায় হঠাৎ করেই পরিমাণ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি আমানতের প্রবৃদ্ধি সে অনুপাতে না হওয়ায় প্রভিশন রাখা অনেক ব্যাংকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না পাওয়ায় শুধু বার্ষিক প্রতিবেদন নয়, এখন পর্যন্ত ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে পারছে না এসব ব্যাংক। এতে বিনিয়োগকারীরা গত ছয় মাসের আর্থিক চিত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, শেয়াবাজারে তালিকাভুক্ত বাকি ১৭টি ব্যাংক এরই মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।