
সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ। তিনি হত্যা মামলার আসামি হয়েও গভীর রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করেছেন। এতে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে একজন আসামি রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারেন?
সূত্র জানায়, বুধবার (০৭ মে) রাত ১১টার দিকে আব্দুল হামিদ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ ফ্লাইটে তিনি রাত ২:৪৫ মিনিটে রওনা দেন ব্যাংককের উদ্দেশ্যে। ব্যাংককে পৌঁছান ভোর ৬:১৫ মিনিটে।
ফ্লাইট টিকিট অনুযায়ী, ৬ মে তার টিকিট বুক করা হয়। পাসপোর্ট অনুযায়ী, তিনি ৮ মে ঢাকা ত্যাগ করবেন ও আগামী ৭ জুন দেশে ফিরবেন।
আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তারপরও তিনি কীভাবে এত সহজে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পেলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
এ ঘটনা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিএনপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, খুনিকে নিরাপদে দেশ ত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়। পুলিশ ধরলেও আদালত জামিন দেয়। পাসপোর্ট বাসায় গিয়ে করে দেয়া হয়। আপনারা বলেন বিচার করবেন—কোথায় সে বিচার?
তিনি আরও লেখেন, দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও মে মাসে এসেও শুরু হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো বিচার বা সংস্কার হয়নি।
আরও পড়ুন>>>খাসিয়া হাওর সীমান্তে উত্তেজনা, মুখোমুখি বিএসএফ-বিজিবি
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। এরপর আত্মগোপনে চলে যায় দলের শীর্ষ নেতারা। অনেকেই দেশ ত্যাগ করে। আব্দুল হামিদ এতদিন দেশে ছিলেন, তবে শেষমেশ তিনিও পাড়ি জমান বিদেশে। তিনি ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল হামিদের শালক ডা. নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদও দেশ ত্যাগ করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।
যদিও টিকিটে ফেরার তারিখ উল্লেখ রয়েছে ৭ জুন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—আবদুল হামিদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। অনেকেই বলছেন, এটি একটি ‘পরিকল্পিত পালায়ন।
সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিক, ছাত্রনেতা, সক্রিয় নাগরিক—সবাই প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে একজন হত্যা মামলার আসামিকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হলো?
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান লিখেছেন—আমি শুরু থেকেই এই সরকারের সমালোচনা করে এসেছি। কারণ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বসে আছে ওয়ান-ইলেভেনের দোসররা। তারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। ২০১৮ সাল থেকে সরকারে থাকা কিছু উপদেষ্টার সঙ্গে তার পরিচয় আছে। এ উপদেষ্টারাই সরকারের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। ওবায়দুল কাদেরসহ যেসব নেতা পালিয়েছে, তারাও ‘সরকারের সবুজ সংকেত’ পেয়েই দেশ ছেড়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন—আব্দুল হামিদ তো সরকারি বিধি মেনেই বিদেশে গেছেন। অনুমতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাহলে হাসিনাও চাইলেই দুদকের তলবে হাজির হয়ে আবার সরকারি বিধি মেনে ভারত যেতে পারে।
শুধু পরিচিত রাজনীতিবিদ বা নেতারা নন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ছাত্রনেতারাও সোচ্চার। তাদের বলেন, এ ঘটনা দেখিয়ে দেয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক সদস্য এখনো ‘পূর্ববর্তী শাসকের ছায়া’তে পরিচালিত হচ্ছে।
গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলায় শুধু তিনিই নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদেরসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে। মামলাটি ছাত্রনেতা হত্যাকাণ্ডসংক্রান্ত। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন থাকলেও বিচার কাজ শুরু হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও খুনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। অনেকে এরই মধ্যে আত্মগোপনে চলে গেছেন বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এ প্রেক্ষাপটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ব্যাংকক গমনের ঘটনাকে অনেকে দেখছেন ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বা ‘পালানোর সূচনা’ হিসেবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।