
ছবি: আপন দেশ
ডিপ্লোমা নার্সিং ডিগ্রিকে স্নাতক সমমান দেয়ার দাবিতে রাজপথে নেমেছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। দু’পক্ষের একযোগে অবরোধ কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি মোড়—শাহবাগ ও কাকরাইল। এ অবরোধের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকার সাধারণ মানুষ।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ভারি বৃষ্টির মধ্যে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
শাহবাগ মোড় অবরোধের ফলে আশপাশের মৎস্য ভবন, পল্টন, গুলিস্তান, নয়া পল্টন, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও বিজয়নগর এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।একইভাবে কাকরাইল মোড় অবরোধের প্রভাব পড়ে প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, শান্তিনগর ও আশপাশের এলাকায়। বিকেল গড়াতে গাড়ির চাপ বাড়ে।
অফিস শেষ হওয়ায় একসঙ্গে মানুষ রাস্তায় নামলে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় আটকে থাকতে হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনকে। অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দেন।
সাভার পরিবহনের হেলপার ওলিউর রহমান জানান, সদরঘাট থেকে দুই ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েছি। এখনো মৎস্য ভবনের কাছাকাছি যেতেও পারিনি। মিডলাইন পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন বলেন, হাইকোর্ট ফোয়ারার মোড়ে আটকে আছি। সামনে গাড়ি চলছে না। পুরো রাস্তা থেমে আছে।
একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন মোটরসাইকেল আরোহী রেজানুর ইসলাম। তিনি বলেন, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে যাচ্ছি। আত্মীয় অসুস্থ। কিন্তু এত যানজট যে মোটরসাইকেলও চলছে না। মনে হচ্ছে হেঁটে যেতে হবে।
যানজটের কারণ জানতে চাইলে ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, বিকেলের সময় এমনিতেই যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। সেখানে দুপুর থেকে শাহবাগ ও কাকরাইলের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
তিনি জানান, আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা কেউ সড়ক ছাড়ছেন না। তবে জনগণকে আটকে রাখা যাবে না। সে কারণে বিকল্প রুটে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নগরবাসীকে ডাইভারশন ও বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। বাংলামোটর, নিউমার্কেট, হেয়ার রোড ও নীলক্ষেত দিয়ে ডাইভারশন চালু করা হয়েছে।
এর আগে সকাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি শুরু করেন। পথে বাধা পেলে তারা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন।
তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে।
২. ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট ছাড়াই অনুমোদন দিতে হবে।
৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে তা অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
অন্যদিকে, ডিপ্লোমা নার্সিং শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তাদের চার বছর মেয়াদি কোর্সকে স্নাতক ডিগ্রির মর্যাদা দিতে হবে। বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে শাহবাগের দিকে যাত্রা শুরু করেন তারা। শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিলেও শিক্ষার্থীরা তা অতিক্রম করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এরপরই বন্ধ হয়ে যায় মোড়ের যান চলাচল।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ অব্যাহত ছিল। ফলে অবরোধের প্রভাব রাজধানীর অলিগলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা, বিশেষ করে অফিস ফেরত মানুষ।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।