Apan Desh | আপন দেশ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৬:৫৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

ছবি: আপন দেশ

কিশোরগঞ্জ শহরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের ১৩টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে মিলেছে ৩৫ বস্তা টাকা। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনা রূপার অলংকার। এখন চলছে টাকা গণনার কাজ। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে টাকার পরিমাণ। দুপুর ২ টা পর্যন্ত ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ইন্না করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

৩ মাস ২৭ দিন পর শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১০ মিনিটে এ দানবাক্সগুলো খুলে ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। সকালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার উপস্থিতিতে এ দানবাক্সগুলো খোলা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মিজাবে রহমত, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান মারুফসহ সেনা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।

প্রথমে লোহার সিন্ধুক খুলে টাকাগুলো বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদে দ্বিতীয় তলায় নেওয়ার পর সেখানে শুরু হয় গণনার কাজ। চলমান এ কাজে অংশ নিয়েছেন মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী,জামিয়া এমদাদিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মাচারীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের একটি দল। এ গণনার কাজ সন্ধ্যা অবধি শেষ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তিন মাস পর পর সিন্দুক খোলার কথা থাকলেও এবার ২৭ দিন বিলম্বে খোলা হয়।

এর আগে, গত ৩০ আগস্ট সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩২ বস্তায় ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা পাওয়া গিয়েছিল । এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া যায়। এবার অনেকেই আশা করছেন দানের পরিমাণ আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে।

পাগলা মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়, এমন ধারণা থেকে প্রায় তিনশত বছর ধরে মানুষ মানত করে দান করে আসছিলেন। গত দুই যুগ ধরে মিডিয়ার কল্যাণে দেশব্যাপী এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে এ মসজিদে দান করছেন। যারা দান করতে আসেন তাদেরও ধারণা, এখানে দান করলে নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়। ফলে দিন দিন বাড়ছে দানের পরিমাণ। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় এতো মুসুল্লিদের সমাগম ঘটে যে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না।

পাগলা মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রাপ্ত টাকা থেকে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। যেখানে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি তাদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। যারমধ্যে ৫ হাজার নারী মুসুল্লির নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে ওই কমপ্লেক্সে। বর্তমানে মসজিদ ফান্ডে শতকোটি টাকা জমা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

জনশ্রুতি আছে, মসনদে আশা ঈসা খাঁর বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে পাগলা বিবি কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে এসে নামাজ আদায় করতেন। তা শুনে দেওয়ান মান্সনান দাদ খান এখানে একটি ছোট্ট মসজিদ করে দেন। তারপর থেকে মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজন মানত করে আসছেন। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন।

বর্তমানে কিশোরগঞ্জ ঐতিহাসিক এ পাগলা মসজিদ অনেকের কাছে তীর্থস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সটির ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা আছে। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে দুস্থ অসহায় অসুস্থ মানুষকে অনুদান প্রদান ছাড়াও বিভিন্ন বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।

জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানান, মসজিদের দ্বিতীয় তলায় টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। সাধারণত ৩ মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতির কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এবার আশা করা হচ্ছে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে।

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়