ফাইল ছবি
মাছ ধরে বিক্রি করাই তাদের পেশা। এতে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার, বাসা ভাড়া আর ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ। কিন্তু দেড় মাস আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরেননি। খোঁজ মেলেনি চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং বোট মালিকসহ ১৮ জেলের।
তারা বেঁচে আছেন, নাকি পার্শ্ববর্তী দেশের কোনও বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে কিছুই জানে না তাদের পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকায় উদ্বিগ্ন স্বজনদের চোখে ঘুম নেই। ১৮ জেলের সন্ধানে নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরনা দিচ্ছেন তারা।
নিখোঁজ জেলেরা গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার নতুন ফিশারিঘাট থেকে ‘এফ বি খাজা আজমীর’ নামে ফিশিং বোট নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে যান।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না ফেরায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। ওই ফিশিং বোটের মালিক আলী আকবরের স্ত্রী সেলিনা বলেন, শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত আমার স্বামীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৪৪ দিন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। এদিকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চরম কষ্টে আছি। তারা বাবার চিন্তায় অস্থির। প্রতিদিন কান্নাকাটি করছে।
মানসিক যন্ত্রণার পাশাপাশি পরিবারে আর্থিক কষ্ট নেমে আসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার চার ছেলেমেয়ে। বড় ছেলে আবেদ ইসলাম (২০) অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে। ছোট মেয়ে তাসিয়া জান্নাত (৮) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অপর দুই ছেলেমেয়েও লেখাপড়া করছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে নগরীর ষোলশহর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। স্বামীর আয়ের ওপর আমার পুরো পরিবার নির্ভরশীল। দেড় মাস ধরে আমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে আমরা আর্থিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়েছি। বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো নাকি থাকবো বুঝতে পারছি না।
আরও পড়ুন<<>>তারেক রহমান শীঘ্রই দেশে ফিরবেন: এনাম চৌধুরী
সাগরে নিখোঁজের এ ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট নৌ থানায় সেলিনা আক্তার একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্বামী আলী আকবর (৪৯) দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিজের মালিকানাধীন ‘এফ বি খাজা আজমীর’ নামে ফিশিং বোটটি নিয়ে তার স্বামী মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় সাগরে যান। এরপর থেকে বোটের মাঝি আবু তাহের (৫৫), স্টাফ জামাল (৪৫), বাবুর্চি রুবেলসহ (৩৫) আরও ১৪-১৫ জন স্টাফ নিখোঁজ রয়েছেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বামীর সঙ্গে সেলিনার সর্বশেষ ফোনালাপ হয়েছিল। এরপর থেকে তার এবং অন্য স্টাফদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
সেলিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামীসহ মোট ১৮ জন শিপিং বোট নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর সাগরে মাছ ধরতে গেছেন। প্রতি মাসে তারা প্রায় তিন থেকে চারবার সাগরে মাছ ধরতে যান। প্রতিবারই সাত-আট দিন পর সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৮ জেলে এখনও ফিরে আসেননি। এখন পর্যন্ত তাদের কোনও খোঁজ মেলেনি। তাদের ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে, নাকি আরাকান আর্মি কিংবা অন্য কেউ ধরে নিয়ে গেছে, তা বুঝতে পারছি না। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান পেতে কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের উদ্ধারে নৌ-পুলিশও কাজ করছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































