Apan Desh | আপন দেশ

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ২০ জুলাই ২০২৫

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী।

এ ঘটনায় ঢাকা সিএমএম আদালত ও যশোরে আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন করেন ভুক্তভোগী। তার স্বামী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেখিয়ে তাকে হেনস্তা করবেন- এমন হুমকি দিয়েছেন বলে জানান চৈতী। এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. আসিফ আলী জিভাল। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি যেহেতু মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সে কারণে আদালতেই এর সুরাহা হবে।

জানা গেছে, যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিবি রোড এলাকার দেওয়ান মিজানুর রহমানের মেয়ে দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। অপরদিকে, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে আসিফ আলী জিভালও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পূর্বের জানা শোনা থেকে পরিচয় ও অন্তরঙ্গতার একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ তারা ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।

জিভাল ও চৈতীর এর আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং উভয়েই তালাকপ্রাপ্ত হয়ে এ বিয়ে করেন। চৈতীর প্রথমপক্ষে একটি মেয়ে রয়েছে। যা দুজনেই তাদের অ্যাফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন।

চৈতীর অভিযোগ, বিয়ের পর সুখে-শান্তিতেই তাদের সংসার শুরু হয়। এক মাস যেতে না যেতেই জিভাল গত বছরের ১৯ এপ্রিল একটি গাড়ি কেনার জন্যে তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কাঙ্খিত টাকা দিতে না পারায় জিভাল তাকে মারধর ও মানসিকভাবেও অত্যাচার করেন। পরদিন যশোরে বাবার বাড়ি চলে যান এবং হাসপাতাল ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন।

তিনি জানান, সংসার টিকিয়ে রাখতে দুপক্ষের আপস-মীমাংসার পর পুনরায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান। এরপর ১৫ নভেম্বর তিনি বাবার বাড়ি বেড়াতে এলে জিভালও আসেন। যশোরে এসেও তিনি গাড়ি কেনার সে ২৫ লাখ টাকার জন্যে ফের চাপ দিতে থাকেন। পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা জানিয়ে ওই টাকা দিতে পারবে না জানালে জিভাল এখানেও তাকে মারধর করেন।

চৈতি অভিযোগ করেন, তাকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে চড়, লাথি মারতে থাকেন জিভাল। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায় এবং ঠোঁট কেটে যায়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। পরে যৌতুকের দাবিতে মারপিটের অভিযোগে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন তিনি।

ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের দুজনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল। এ বিষয়ে আমরা দুজনই অবগত। এসব জেনে শুনেই আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকেই জিভাল পল্লবী নামে আরেক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। তাদের সে সম্পর্কে বাধা হওয়ায় যৌতুকের দাবিতে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন জিভাল। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা এবং যশোর আদালতে আরেকটি মামলা করি।

তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনার আদ্যোপান্ত উল্লেখ করে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করি। তিনি কোনো সুরাহা না করায় গত ০২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়েছি। সেখানে যৌতুকের দাবিতে মারপিটসহ পরনারীতে আসক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছি। এখন সবকিছু ভুলে আবারও স্বামী-সংসার করতে চাই।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভাল বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে কখনো একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সংসার বা থাকা হয়নি।

তাকে মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, চৈতিকে কেন আমি নির্যাতন করবো বা যৌতুক চাইবো। তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সময় আমি সাভারে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। বিষয়টি আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেন। মূলত আমাকে হেনস্তা করতেই এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। যেহেতু মামলা করেছে, আদালতই বিচার করবেন।

আপন দেশ/এমএইচ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়