
ছবি : আপন দেশ
বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে নতুন সংকটে পড়েছেন ফেনীর দুর্গত মানুষজন। পানি যতই সরছে, ততই ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যায় বিভিন্ন সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি স্থানে ভেঙে ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) নতুন করে কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি।
পানি নামলেও অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ নেই, অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর দিন পার করছেন।
বন্যাদুর্গত ফুলগাজীর আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ইউএনও ফারিয়া ইসলাম বলেন, এখনও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু হয়নি। পানি নামলেও অনেক ঘর বসবাসযোগ্য নয়। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সমন্বিতভাবে কাজ করছি।
পরশুরামের ইউএনও আরিফুল ইসলাম জানান, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় অনেক কিছুই কম পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় ২ হাজার ৩৫০টির বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় এখন পর্যন্ত পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান তারা।
ফেনীর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, গত চার দিনের বন্যায় ফেনীতে ৫ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৬০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুক্রবার (১০ জুলাই) রাত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছেন ৫ হাজার ১৮ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ৫ উপজেলায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি স্থানে ভেঙ্গে ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, পুলিশ বাহিনী মাঠে অবস্থান করে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
বিজিবি ফেনীর সিও লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, বিজিবি সদস্যরা বানভাসিদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন এবং খাদ্য সামগ্রী, ওষুধসহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে উল্লেখযোগ্য ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি। ফেনী জেলার সিলোনিয়া ও মুহুরী নদীসমূহের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি লাভ করতে পারে। এ অববাহিকায় আগামী তিনদিন মাঝারি থেকে মাঝারি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।