
ছবি: সংগৃহীত
তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটক ও বনজীবীদের জন্য আজ (০১) উন্মুক্ত হলো সুন্দরবন। প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় টানা তিন মাস বন্ধ ছিল সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের দুয়ার। এদিকে, সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য শেষ মুহুর্তে জাল, নৌকা ও পর্যটকবাহী ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকার জেলে, বাওয়ালী ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে দম ছাড়ার সময় নেই যেন তাদের।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় জানিয়েছে, বনের জীববৈচিত্র রক্ষায় জুন, জুলাই ও আগস্ট তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। গত বছর সুন্দরবনে বনজীবী প্রবেশ করেছিল ৭০ হাজারের বেশি। দেশি পর্যটক গিয়েছিল ৪৫ হাজার ১৩৮ জন, বিদেশি ৭০ জন এবং তীর্থযাত্রী ৪০১ জন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৭ লাখ টাকা।
উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বনজীবীরা এরই মধ্যে তাদের জাল, দড়ি ও নৌকা গুছিয়ে নিয়েছেন। অনুমতিপত্র পেলেই মাছ ও কাকড়া ধরতে ঢুকবেন সুন্দরবনে।
গাবুরা ইউনিয়নের বনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, গত তিন মাস খুব কষ্টে কেটেছিল। সুন্দরবন বন্ধ থাকলে আমাদের আয় রোজগারের পথও বন্ধ থাকে। সুন্দরবন উন্মুক্ত হওয়ায় আমরা সবাই খুশি।
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার ট্রলার মালিক নূর ইসলাম জানান, টানা তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তার ট্রলারটি অকেজো পড়ে ছিল । এর ফলে নৌকার অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তিনি সেটি মেরামত করছেন। তিনি আরও জানান, সুন্দবনে যাওয়ার পাসপারমিট ছাড়ার পর আয় করে তা দিয়ে সমিতির ঋণের টাকা শোধ করবেন। এ সময় ঋণ পরিশোধ করে পরিবার চালাতে বেশ কষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেন নূর ইসলাম।
আরওপড়ুন<<>>সৌদির খেজুর চাষে মোতালেবের আয় বছরে ৫০ লাখ
দাতিনখালি গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর সানা জানান, সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকায় গত তিন মাস বেশ কষ্টে কেটেছে। সুদ করে টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হয়েছে। এখন পরিশোধের পালা।
সুন্দবনের উপর নির্ভরশীল একাধিক জেলে জানান, সুন্দরবনের ১০০ ভাগের মধ্যে ৫২ ভাগ অভয়ারণ্য। খোলা আছে আছে ৪৮ ভাগ। বাকীটা উন্মুক্ত করেতে হবে। কারণ সুন্দরবনের যে জায়গাগুলো উন্মুক্ত সেখানে দুই থেকে তিন হাজার জেলে-বাওয়ালী মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করে। এজন্য চালান উঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।
তারা আরও বলেন, টানা ৩ মাস সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকে। কিন্তু এই সময়ে কিছু অসাধু চক্র বিষ দিয়ে মাছ শিকার এবং ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে। যার বেশির ভাগই অভয়ারণ্যে ঘটে থাকে। কিন্তু বনবিভাগ সেদিকে ঠিকমত দেখভাল করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন জেলেরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কারও কোনো অসুবিধা হলেই সকলকে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।
বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ০১ সেপ্টেম্বর হতে জেলে, বাওয়ালী ও পর্যটকদের জন্য সুন্দবনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। এরই মধ্যে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে মোট ২ হাজার ৯৭০টি পাসপারমিট নবায়ন করা হয়েছে। নবায়নকৃতরা সরকারি রাজস্ব দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. ফজলুল হক বলেন, বনজীবীদের নিরপত্তায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রেঞ্জ এলাকার মধ্যে পর্যটন স্পটগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বন বিভাগসহ নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি এবং স্মার্ট টিম তৎপর থাকবে।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।