Apan Desh | আপন দেশ

সৌদির খেজুর চাষে মোতালেবের আয় বছরে ৫০ লাখ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:০২, ২০ আগস্ট ২০২৫

সৌদির খেজুর চাষে মোতালেবের আয় বছরে ৫০ লাখ

ছবি: আপন দেশ

বাণিজ্যিকভাবে সৌদি আরবের খেজুরের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মোতালেব। তার বাগানের সারি সারি গাছে ঝুলছে বাহারি জাতের খেজুর। খেজুরের আকার ও স্বাদ সৌদি খেজুরের মতোই। বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। খেজুর ও চারা বিক্রি করে প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকা আয় করছেন মোতালেব। তার এমন সফলতায় খেজুর আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।

মোতালেবের খেজুর বাগানে সারি সারি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরু দেশের ফল খেজুর। ছোট-বড় সব গাছেই আজওয়া, সুক্কারি, আমবাগ ও বকরিসহ বাহারি রঙের খেজুরের কাঁদি।

জানা যায়, আব্দুল মোতালেব ভাগ্য বদলে ১৯৯৭ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরব। সেখানে তিনবছর কাজ করেন খেজুর বাগানে। সেখানে খেজুর বাগান পরির্চযাসহ নানা কায়দা-কানুন শেখেন। পরে বিভিন্ন জাতের ৩৫ কেজি খেজুর নিয়ে ফিরে আসেন দেশে। এরপর বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন বাগান। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে সৌদি খেজুর এবং আট বিঘায় দেশীয় ও সৌদি ক্রস জাতের খেজুর বাগান তার। ২৭৫টি চারা নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাগানে এখন গাছ রয়েছে তিন হাজারের বেশি। খেজুরের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করেন গাছের চারাও। খরচ বাদে বছরে তার লাভ থাকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে ঝুলছে সৌদি খেজুর। মোতালেব জানান, বাজারে আজওয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে চার হাজার এবং মরিয়ম ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু খেজুর নয়, চারারও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাটিং করা একটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর বীজ থেকে তৈরি চারা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

তিনি আর বলেন, আমি পড়ালেখা করিনি, কিন্তু কৃষিকাজ জানি। সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করে ভাবলাম, দেশে যদি খেজুর চাষ করতে পারি, তাহলে বিদেশ যেতে হবে না। সে চিন্তা থেকেই দেশে বীজ নিয়ে আসি। দীর্ঘ ১৮ বছরের গবেষণায় মাত্র ৭টি মাতৃগাছ পেয়েছি। সেখান থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখন বাগান থেকে যে আয় হচ্ছে তাতে আমার পরবর্তী প্রজন্মও স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবে।

বাবার পাশাপাশি খেজুরবাগান গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছেন মোতালেবের ছেলে মিজানুর রহমানও। তিনি বলেন, ২০২৩ সাল থেকে বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করি। খেজুরগাছে কাটিং করে নতুন চারা উৎপাদন শিখেছি। পাশাপাশি দেশি ও সৌদি খেজুরগাছ ক্রস করে এমন একটি জাত উদ্ভাবন করেছি, যেটি থেকে প্রচুর রস উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে বাবা-ছেলে মিলে ৮ বিঘা জমিতে প্রায় ৮ হাজার খেজুরগাছ নিয়ে নতুন একটি বাগান করেছেন, যার মাধ্যমে গুড় উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

মোতালেবের বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আশপাশের অনেকে খেজুরচাষে আগ্রহী হয়েছেন। আফাজ পাঠান নামের এক উদ্যোক্তা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে মোতালেবের কাছ থেকে শিখে খেজুরবাগান শুরু করি। বর্তমানে চারটি স্থানে ১০ একর জমিতে বাগান রয়েছে। বছরে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

দর্শনার্থীরা জানান, তারা বাংলাদেশে সৌদির খেজুর দেখে অবাক হয়েছেন। আশেপাশের অনেকেই খেজুরের বাগান দেখে নতুন করে বাগান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভালুকা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, খেজুরে রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়। আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সরাসরি কোনো প্রকল্প নেই। সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া গেলে আরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে।

আপন দেশ/এমএইচ
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়