ফাইল ছবি
ফেসবুকে লিংক শেয়ারের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সীমাবদ্ধতা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে মেটা। এ পরীক্ষার আওতায় নির্দিষ্ট কিছু বিনা মূল্যের ব্যবহারকারী মাসে খুব সীমিত সংখ্যক লিংক–সংবলিত পোস্ট করতে পারবেন। নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে তাদের ‘মেটা ভেরিফায়েড’ সাবস্ক্রিপশন নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ সাবস্ক্রিপশনের মাসিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৯ মার্কিন ডলার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা প্রথম এ পরিবর্তনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। তিনি জানান, কয়েকজন ব্যবহারকারী টানা এক সপ্তাহ লিংক পোস্ট করতে না পারার অভিযোগ জানানোর পর তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। পরে স্ক্রিনশটসহ তিনি জানান, ফেসবুক কিছু ব্যবহারকারীর কাছে নোটিফিকেশন পাঠিয়ে জানাচ্ছে—১৬ ডিসেম্বর থেকে মেটা ভেরিফায়েড নয়, এমন প্রোফাইল মাসে সর্বোচ্চ দুটি অর্গানিক পোস্টে লিংক যুক্ত করতে পারবে।
আরও পড়ুন<<>>আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
তবে এ সীমাবদ্ধতা সব ধরনের লিংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিনা মূল্যের অ্যাকাউন্ট থেকেও মন্তব্যে লিংক দেয়া যাবে। একই সঙ্গে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহারেও কোনো বাধা থাকছে না। এছাড়া ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও থ্রেডসের মধ্যে নিজেদের পোস্টের লিংক শেয়ার আগের মতোই করা যাবে।
থ্রেডসে দেয়া এক পোস্টে ম্যাট নাভারা জানান, মেটার পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়েছে—এটি একটি সীমিত পরিসরের পরীক্ষা। এর মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে, বেশি লিংক–সংবলিত পোস্ট করার সুযোগ মেটা ভেরিফায়েড গ্রাহকদের জন্য বাড়তি মূল্য তৈরি করে কি না।
মেটার পাঠানো বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত সীমার বাইরে লিংক শেয়ার করতে চাইলে মেটা ভেরিফায়েড সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। এ প্যাকেজের আওতায় ব্যবহারকারীরা ভেরিফায়েড ব্যাজ, উন্নত অ্যাকাউন্ট সুরক্ষা এবং পরিচয় সুরক্ষার মতো অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন।
মেটা আরও জানিয়েছে, আপাতত সংবাদমাধ্যম বা প্রকাশকদের অ্যাকাউন্টকে এ পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। একই সঙ্গে পোস্টে লিংকের সীমা থাকলেও মন্তব্যে লিংক শেয়ার করা যাবে বাধাহীনভাবে।
টেকক্রাঞ্চকে দেয়া এক বিবৃতিতে মেটার এক মুখপাত্র বলেন, এটি একটি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ। এর লক্ষ্য হচ্ছে—লিংক–সংবলিত পোস্টের অতিরিক্ত সুবিধা সাবস্ক্রিপশন গ্রাহকদের জন্য কতটা কার্যকর তা যাচাই করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে কনটেন্ট নির্মাতা ও ব্র্যান্ডগুলোর ওপর। অনেকেই ফেসবুককে ব্যবহার করেন নিজেদের ব্লগ, ভিডিও বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টে দর্শক টানার প্রধান মাধ্যম হিসেবে। নতুন এ সীমাবদ্ধতা তাদের পৌঁছানোর পরিসর সংকুচিত করতে পারে।
মেটার তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের মোট ভিউয়ের ৯৮ শতাংশের বেশি এসেছে লিংকবিহীন পোস্ট থেকে। লিংক–সংবলিত পোস্টে ভিউয়ের হার মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব ভিউয়ের বড় অংশই এসেছে পেজ অনুসারীদের কাছ থেকে; বন্ধু বা গ্রুপভিত্তিক ভিউ তুলনামূলকভাবে কম।
সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া লিংক ডোমেইনের তালিকায় রয়েছে ইউটিউব, টিকটক ও গোফান্ডমি। ফলে নতুন এ সীমা কার্যকর হলে ফেসবুকের বাইরের প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট ছড়িয়ে দেয়া সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চ ও স্বয়ংক্রিয় কনটেন্ট সারসংক্ষেপের বিস্তার ইতোমধ্যে লিংকভিত্তিক ওয়েবের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এক্স (সাবেক টুইটার)–এর মতো প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মের ভেতরে ধরে রাখতে লিংক পোস্টের বিস্তার কমানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকের এ নতুন পরীক্ষা সে ধারারই আরেকটি ইঙ্গিত বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































