ছবি : আপন দেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা শুরুর আগে আবেগঘন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
তারেক রহমান বলেন, ‘কারও কাছে যদি মরহুমা খালেদা জিয়ার কোনো ঋণ থেকে থাকে, তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি অবশ্যই তা পরিশোধের ব্যবস্থা করব, ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে তার কোনো ব্যবহারে বা কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, মায়ের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।’
আরও পড়ুন : জনতার জনসমুদ্রে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত
এসময় তারেক রহমানের এই বক্তব্যে জানাজাস্থলে উপস্থিত হাজারো মানুষের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনেককে চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়।
এরপর বেলা ৩টা ৩ মিনিটের দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা তথা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর জানাজায় ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মালেক।
বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতরা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিদেশি অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, আলেম-ওলামাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন।
এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের আশপাশ, বিজয় সরণি, খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। যে যেখানে পারেন সেখানেই দাঁড়িয়ে জানাজায় যোগ দিয়েছেন।
জানাজার আগে বেগম জিয়ার দীর্ঘ জীবন নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পরে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে কথা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আপনারা আমার মরহুমা মায়ের জন্য দোয়া করবেন। করো কাছে আম্মার কোনো ঋণ থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি পরিশোধ করব। কেউ আমার মায়ের আচরণে বা কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এ জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সারা দেশ থেকে আসেন লাখ লাখ মানুষ। আশপাশের পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও পর্যন্ত এলাকায় লাখ লাখ মানুষ এ জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে, বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হয়। তাকে বহন করা হয়েছে লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি ফ্রিজার ভ্যানে। সেনাবাহিনী হিউম্যান চেইন তৈরি করে রাষ্ট্রীয় প্রোটকলে তার মরদেহ সেখানে আনা হয়।
সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে বের করে গুলশানে নেয়া হয়। শুরুতে তার দীর্ঘদিনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নেয়ার কথা থাকলেও পরে গাড়িটি তারেক রহমানের গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়ার স্বজন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানান। বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে ছেলে তারেক রহমানের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি যাত্রা শুরু করে।
বেগম খালেদা জিয়া চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ ঢাকায় আসছেন ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছাড়া জানাজা উপলক্ষে বুধবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আপন দেশ/এনএম
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































