কক্সবাজারে উজরা জেয়া
কক্সবাজারে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সব কিছু যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণে আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। আজ (১২ জুলাই) বেলা পৌনে ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী ও আশপাশের তিনটি আশ্রয়শিবির এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার শরণার্থী সেবা কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
আশ্রয়শিবির পরিদর্শনকালে অন্তত ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন এই মার্কিন কর্মকর্তা। উপস্থিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১২ জন আশ্রয়শিবিরের ভেতরে গড়ে তোলা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক। এ সময় রোহিঙ্গা নারী ছিলেন সাতজন।
বৈঠক শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, উজরা জেয়া তাঁদের (শিক্ষক ও ইমাম) কাছে জানতে চেয়েছেন, আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গারা ঠিকমতো ধর্মকর্ম করতে পারছেন কি না? আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন? জবাবে তাঁরা বলেছেন, আশ্রয়শিবিরে স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম করা গেলেও নিরাপত্তার অভাব খুবই। প্রায় প্রতিদিন খুনখারাবি, অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছেন। পুলিশের সঙ্গেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
এসময় রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা তাকে জানান, অধিকার-মর্যাদা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে নিজ দেশ মায়ানমারে ফিরতে চান তারা। এজন্য তারা সহযোগিতা চেয়ে মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার কাছে চিঠি দিয়েছেন।
বুধবার (১২ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে গেলে তাকে এই চিঠিটি দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ৯ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদলটি ঢাকা থেকে বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর সড়কপথে সরাসরি উখিয়ার বালুখালী (ক্যাম্প-৯) আশ্রয়শিবিরে যায়।
জানা গেছে, উজরা জেয়াকে দেয়া চিঠিতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচআর) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জুবায়েরের সই রয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আদিবাসী জাতি। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছি। আমাদের নিজস্ব জন্মভূমি থাকলেও অন্য দেশে স্থানান্তরিত হয়ে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এখানে আশ্রয়ে আছি। আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা, কারণ এটি একটি ছোট দেশ।’
এতে আরও বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের বেসামরিক নাগরিকদের ধন্যবাদ জানাই। তারা আমাদের কঠিন সময়ে তাদের অসুবিধা না ভেবেই আদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছেন। তারা আমাদের মানবিক সহায়তা দিতে দ্বিধা করেননি। সেজন্য তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। মূল্যবান সময় ব্যয় করে শরণার্থী শিবিরে আমাদের দেখতে আসার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে। অথচ তারা এখন অস্বীকার করছে যে, আমরা মিয়ানমারের জাতি নই। তারা সংসদের রেজিস্টার থেকে আমাদের জাতীয়তা বাতিল করেছে। মিয়ানমার সরকার ও কিছু বৌদ্ধ রাজনীতিবিদ একতরফা খেলা খেলছে। বিশ্ব নীরব থেকে আমাদের খেলা দেখছে কিন্তু ইউনাইটেড (যুক্তরাষ্ট্র) তা নয়।’
‘তাই আমরা রোহিঙ্গা জনগণ আশা করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত আমাদের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ কাজ করবে। আমরা রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জবাবদিহিতা, মানবাধিকার নিয়ে আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জুবায়ের বলেন, ক্যাম্পে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটা চিঠি দিয়েছি। চিঠিটি আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
জবাবে উজরা জেয়া রোহিঙ্গাদের বলেন, আইসিসির বিচার ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া। সবকিছু তাদের পর্যবেক্ষণে আছে। এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা নেতাদের ধৈর্য ধরতে বলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
১০ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে উজরা জেয়া ও দক্ষিণ-মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর, বিশেষ সহকারী ব্রায়ান ওয়াকলি, স্টাফ সহকারী ক্যাথরিন হেরেটিক, সিনিয়র মানবিক উপদেষ্টা লিন্ডসে হার্নিশ, মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স আমেনা ইসলাম, মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রবার্ট রবেইরো ও সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জান-লিন্ডেন মিলান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডেভিড হাস।
পরে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের জানিয়েছি, আমরা মর্যাদা নিয়েই দ্রুত দেশে ফিরতে চাই।’
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































