ছবি: আপন দেশ
কৃষিভিত্তিক উৎপাদন সম্প্রসারণের ফলে দেশে মাছের সরবরাহ বাড়লেও এর সঙ্গে সঙ্গে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য নিরাপত্তা। ফুড সেফটি নিশ্চিত না হলে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর কোন অর্থ নেই। একুয়াকালচারে উৎপাদিত মাছ যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে সেটিকে প্রকৃত অর্থে মাছ বলা যায় না—এ বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ফোরাম (বিএফআরএফ) -এর উদ্যোগে ১০ম দ্বিবার্ষিক মৎস্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন<<>>
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, মাছ শুধু পেট ভরানোর খাদ্য নয়; এটি বিশেষ পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মাছের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, ক্যালসিয়ামসহ এমন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা চোখ, হাড় ও মেধা বিকাশে সহায়ক। তিনি আরও বলেন, বাঙালির মেধা বিকাশের পেছনেও মাছভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখনও এর পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। বর্তমানে মাত্র প্রায় ৩০ শতাংশ সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে। বরং যেটুকু ব্যবহার হচ্ছে, সেখানেও নানা সমস্যা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আর্টিসনাল ট্রলার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ভিন্ন ভিন্ন পথে মাছ ধরছে এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারে ব্যবহৃত কিছু প্রযুক্তি নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, সাগরে সাতবার গিয়ে একবার মাছ পাওয়ার পদ্ধতি যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি একবারে গিয়ে সব মাছ তুলে আনার জন্য সোনার (সাউন্ড নেভিগেশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) প্রযুক্তির ব্যবহারও সঠিক হতে পারে না।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি জানা গেছে ২২৩টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের মধ্যে প্রায় ৭০টিতে সোনার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে সমুদ্রে ওভারফিশিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। তিনি আরও বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে জাতীয় মৎস্য নীতিমালা হালনাগাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে মৎস্য আইনে কিছু সংস্কার আনা হয়েছে। তবে আরও কিছু বিষয় সংযোজন প্রয়োজন। যা তিনি দায়িত্বে থাকতেই বাস্তবায়ন করতে চান। তিনি বিশেষভাবে ক্ষতিকর মাছ ধরার গিয়ার ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আগে ব্যবহৃত গিয়ারগুলোকেই পরিবর্তন করে এখন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর রূপ দেয়া হচ্ছে। এমনকি ইলেকট্রিক শক ব্যবহার করেও মাছ ধরা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, মৎস্যজীবীদের জন্য প্রণোদনার ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। কৃষি খাতে যে পরিমাণ সহায়তা দেয়া হয়, সে তুলনায় মৎস্যজীবীরা যথাযথ প্রণোদনা পান না। নিষেধাজ্ঞা সময়ে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা না পাওয়ার কারণেই অনেক সময় তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম লঙ্ঘনে বাধ্য হন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, নদীর নাব্যতা হ্রাস, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে ইলিশের প্রজনন ও মাইগ্রেশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। ডলফিন রক্ষার মতোই ইলিশ রক্ষাও একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ইলিশের মাইগ্রেশন রুটে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং কার্যক্রমের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. ফারুক-উল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি (অ্যাড-ইন্টারিম) ড. দিয়া সানো। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভাদ্রা এবং এসিআই পিএলসি-এর গ্রুপ অ্যাডভাইজার ড. এফ. এইচ. আনসারী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফআরএফ-এর সভাপতি ড. জোয়ার্দার ফরুক আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব ড. মো. মনিরুল ইসলাম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহ-সভাপতি ড. মো. খালেদ কানক।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































