Apan Desh | আপন দেশ

কুমিল্লায় ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার গ্রেফতারের দাবি

নিজেস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৩, ৪ আগস্ট ২০২৫

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার গ্রেফতারের দাবি

ছবি: আপন দেশ

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্য রুমা আক্তার। তিনি দাবি করেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন। অথচ পুলিশ তাকে মামলায় আসামি করেনি। 

তিনি বলেন, বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করতে হবে। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সোমবার (০৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসব কথা বলেন তিনি।

গত ৩ জুলাই সকালে কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি বাড়িতে ঘটে যায় নারকীয় এ হত্যাকাণ্ড। রুমা জানান, তার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়। তিনি মারাত্মক জখম হন। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। রুমা অভিযোগ করেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে উপদেষ্টার বাবা বিল্লাল হোসেনের নির্দেশ ছিল। কিন্তু মামলা করার পর পুলিশ তাকে প্রধান আসামি করেনি। উল্টো মামলায় পুলিশ নিজের মতো করে নাম ঢুকিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রুমা বলেন, ঘটনার আগের দিন মোবাইল চুরি নিয়ে গ্রামে হট্টগোল শুরু হয়। এক ছেলেকে মারধর করা হচ্ছিল। ছেলেটির বাবা রুমার মায়ের কাছে সাহায্য চান। রুমার মা গিয়ে বলেন, চোর মরে গেলে তো সবাই ফেঁসে যাব। তাকে ছেড়ে দাও বা পুলিশে দাও। এ কথা বলার পর উপস্থিত কয়েকজন ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা বলেন, তুই চোরের পক্ষ নিচ্ছিস, তুইও চোর। এরপর থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন>>>সাতক্ষীরা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি কৃষক আহত

রুমা জানান, ২ জুলাই রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামে তারু মিয়ার বাড়িতে একটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিমুল চেয়ারম্যান, আনু মেম্বার, বাচ্চু মেম্বার, শরিফ, রবিউলসহ আরও অনেকে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, প্রথমে রুমার মাকে হত্যা করা হবে। পরে পুরো পরিবারকেই মেরে ফেলা হবে।

রুমা বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে টাকা লেনদেন হয়। ভাড়া করা হয় সন্ত্রাসী। দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। শিমুল চেয়ারম্যান বলেন, উপদেষ্টার বাবার অনুমতি আছে, সে সব দেখবে। মিডিয়া ও ঘটনাপরবর্তী ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল, আবু বক্কর, মোস্তফা ও বিল্লাল।

রুমা বলেন, ৩ জুলাই সকাল ৬টার দিকে সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা প্রথমে আমার মাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর আমার ভাই ও বোনকেও মেরে ফেলে। আমি বাঁচার চেষ্টা করি। তবে আমাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ নির্মমতা আমি ভাষায় বোঝাতে পারছি না— বলেন রুমা।

রুমার অভিযোগ, তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ আসার পরও তারা কোনো সহায়তা করেনি। বরং সন্ত্রাসীদের উপস্থিতিতেই হত্যা নিশ্চিত করা হয়। হত্যার পর মামলা হলেও রুমা ও তার পরিবারের বাকি সদস্যরা নিরাপদে নেই। তারা এখন আসামিদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রুমা বলেন, তার মা ছিলেন জনপ্রিয় একজন মানুষ। তিনি দুইবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। বিএনপি সমর্থিত হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগপন্থী স্থানীয় চক্র তাকে জিততে দেয়নি। জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের হয়রানি করা হচ্ছিল। নানা মিথ্যা মামলা, চাঁদাবাজি, এমনকি মাদকের মামলাও দেয়া হয় তাদের পরিবারকে হেয় করতে।

রুমার অভিযোগ, উপদেষ্টা আসিফের বাবার নির্দেশে শিমুল চেয়ারম্যান এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন। এখনও শিমুল চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, শিমুল চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাসায় লুকিয়ে রেখেছে তার বাবা। রুমা বলেন, আমাদের সৎ বাবা জুয়েল হাসানকে তুলে নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছে আসিফ মাহমুদের লোকজন। আজকের পর আমাদের পরিবারের কেউ যদি অন্যরকম কিছু বলে, ধরে নেবেন আমাদের ভয় দেখিয়ে বা জোর করে বলানো হচ্ছে। এ সংবাদ সম্মেলনের পর খুনিরা আরও ক্ষিপ্ত হবে। তাই আমাদের পরিবারের কারও কিছু হলে তার দায় আসিফ মাহমুদ ও তার বাবাকেই নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার নিচের দাবিগুলো জানান-

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করতে হবে, শিমুল চেয়ারম্যানসহ বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে, মামলাটি পুনরায় সাজাতে হবে, বাদীর পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য অনুযায়ী নতুন আসামিদের নাম যুক্ত করতে হবে, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, খুনিদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, পরিবারের সব সদস্যের নিরাপত্তা দিতে হবে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়