Apan Desh | আপন দেশ

৭২–এর সংবিধানেই ফ্যাসিবাদের বীজ: সংস্কার কমিশন

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ২২:২১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২২:২৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৭২–এর সংবিধানেই ফ্যাসিবাদের বীজ: সংস্কার কমিশন

সংগৃহীত ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রথম দফায় গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের একটি ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন এ কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। আজ পাঁচটি খণ্ডে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে কমিশন বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতার মূল কারণ ১৯৭২ সালের সংবিধানের কিছু দুর্বলতা। কমিশনের মতে, ফ্যাসিবাদের বীজ ৭২ সালের সংবিধানের মধ্যেই নিহিত ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭২ সালের সংবিধানের কারণে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ বেড়েছে, আমলাতান্ত্রিকতা তীব্র হয়েছে, বিচারবিভাগ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ও গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি ও দলকেন্দ্রিক রাজনীতি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে।

আরও পড়ুন>>>ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ

এতে বলা হয়, একইভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা দল, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে রুদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করেছে। এভাবে ১৯৭২ সালে একজন একক ব্যক্তি ও একটি দলকে কেন্দ্রে রেখে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত উত্তরোত্তর স্বৈরতন্ত্রী চেহারা ধারণ করতে করতে অবশেষে বাংলাদেশজুড়ে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে।

সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখাসহ দেশের সাংবিধানিক নাম ও সংসদীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের মতো সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

১৪৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ হবে ৪ বছর করে। এ সময় তিনি রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হতে পারবেন না।

আরও পড়ুন>>>অযথা সময়ক্ষেপণ না করে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় সরকার: আসিফ নজরুল

পাঁচ খণ্ডের এ প্রতিবেদনের প্রথমেই রয়েছে ভূমিকা, পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ। এটি তিন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে বিদ্যমান সংবিধানের পর্যালোচনা, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে সুপারিশসমূহ ও তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে সুপারিশের যৌক্তিকতা। দ্বিতীয় খণ্ডে ১২১ দেশের সংবিধানের পর্যালোচনার ফল রাখা হয়েছে; তৃতীয় খণ্ডে রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটিসহ ব্যক্তির মতামতের সারাংশ রয়েছে; চতুর্থ খণ্ডে কার্যাবহ ও পঞ্চম খণ্ডে রাজনৈতিক দলের থেকে সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এরপর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব কমিশনকে ৯০ দিন বা তিন মাসে অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন পর গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক এ চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা হয়। অপরদিকে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়