Apan Desh | আপন দেশ

বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন দেশের কয়েকটি নয়নাভিরাম স্থান

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ১৭ জুলাই ২০২৫

বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন দেশের কয়েকটি নয়নাভিরাম স্থান

প্রকৃতির কাছে দূরের কোনো পাহাড় কিংবা সমুদ্রে বর্ষাযাপনে।

বর্ষা—একটি ঋতু নয়, যেন এক গভীর অনুভূতির নাম। দীর্ঘ খরার পর প্রকৃতির প্রাণ ফিরে আসে যখন আকাশ ভেঙে নামে অবিরাম জলধারা। এ সময়টায় শুধু প্রকৃতিই নয়, মানুষের মনেও বইতে শুরু করে এক ধরণের সতেজ বাতাস। চার দেয়ালের স্থবির জীবনে একঘেয়েমি যখন চেপে বসে, তখন বর্ষা হয়ে ওঠে মুক্তির নামান্তর। এক কাপ গরম চা আর জানালার কাচে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শুনতে শুনতে ভ্রমণের নেশা যেন আরও বেড়ে যায়। আপনি যদি এ বর্ষায় প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চান, তবে দেশের মধ্যেই রয়েছে এমন কিছু জায়গা, যেগুলো এ মৌসুমে হয়ে ওঠে স্বপ্নিল। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব বর্ষা–বান্ধব ভ্রমণ গন্তব্য।

সাজেক ভ্যালি, রাঙামাটি
‘বাংলাদেশের মেঘের উপত্যকা’ হিসেবে খ্যাত সাজেক বর্ষায় হয়ে ওঠে রূপকথার জগতের মতো। পাহাড়ে মেঘের খেলা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর সবুজে মোড়ানো উপত্যকা আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। সাজেক সারা বছরই সুন্দর, তবে বর্ষায় এর সৌন্দর্য যেন অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যায়। এখানে এলে পাহড়িদের সরল জীবনযাপন ও চারপাশের মেঘের খেলা আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। আর যদি এখানে এসে বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ হয়, তবে তো কথাই নেই। বৃষ্টিতে ভেজার পর জানালার ফাঁকে ঝুম বরষায় ভিজে থাকা পাহাড়, হাতে এক কাপ ইস্পাহানি মির্জাপুর চা আর হেডফোনে রবীন্দ্রসংগীত—এর চেয়ে সুন্দর বর্ষাযাপন আর কী হতে পারে! দেশজুড়ে সব সময় পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে সাজেক। পাহাড়ি এ উপত্যকা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়। যাতায়াত করতে হয় খাগড়াছড়ি শহর হয়ে। তাই এ বর্ষায় সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগের পরিকল্পনা সাজাতেই পারেন।

বিছনাকান্দি, সিলেট
পাহাড়, পাথর আর জলধারার চমৎকার মিলনস্থল বিছনাকান্দি, বর্ষাকালে হয়ে ওঠে আরও অপরূপ। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা আর নানা রঙের পাথর—বর্ষার দিনে মেঘ আর হালকা বৃষ্টির ছোঁয়ায় এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেই মনে হয়, কোনো জলরঙে আঁকা ছবির মধ্যেই ঢুকে পড়েছেন। এখানে এসে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেও উপভোগ করতে পারেন বরষা। কারণ, এখানে বৃষ্টিতে ভিজে প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হলেই কেবল পাবেন প্রকৃত আনন্দ। বিছনাকান্দিকে সিলেটের ‘পাথর কোয়ারি’ও বলা হয়। এখানে সব সময় ঘুরতে যাওয়া যায়, তবে বর্ষার সময়টিই বিছনাকান্দি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। বছরের অন্য সময়গুলোতে এখানে পাথর উত্তোলন করা হয়। এতে পর্যটকদের খানিকটা অসুবিধায় পড়তে হয়। সিলেট শহর থেকে সড়কপথে সরাসরি বিছানকান্দি যাওয়া যায়।

পেয়ারার ভাসমান বাজার, স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর
মোটেও কাল্পনিক নয়, সত্যিই এই বাজার ভাসমান। কিছুটা সরু এবং কিছুটা প্রশস্ত খালের ওপর এ বাজার। খালগুলো দূরে সন্ধ্যা নদীতে গিয়ে মিশেছে। এসব খালের কোথাও বসতি, কোথাও আবার বিঘার পর বিঘাজুড়ে পেয়ারাবাগান। পানির ওপরে ভাসমান এ এলাকা যেন এক অন্য রকম রূপে ধরা দেয় বর্ষাকালে। যে কারণে বর্ষার সময় পর্যটকের আনাগোনাও বেড়ে যায় এখানে। ডিঙিনৌকায় করে এমন বাদলা দিনে ভাসমান হয়ে ঘুরে বেড়ানো বৃষ্টিবিলাসের জন্য মোটেও মন্দ হয়। এ অভিজ্ঞতাকে আরও পরিপূর্ণ করে তুলতে সঙ্গে রাখতে পারেন একটি চায়ের পট। চা খেতে খেতে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি সত্যিই অন্য রকম। আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারাবাগান ঘুরে সবাই যান ভীমরুলির ভাসমান বাজারে। অনেকেই আবার বিপরীত পথেও আসেন। আশপাশ এলাকার বাগান থেকে তুলে আনা পেয়ারা বিক্রি হয় ভীমরুলি বাজারে। পেয়ারাবাগান আর ভাসমান হাটের কারণেই পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির ভীমরুলি আর পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা। বর্ষায় এক দিনের ভ্রমণে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ভাসমান এই পেয়ারার বাজার।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সিলেট
জলে ভেসে সবুজ বন দেখতে দেখতে যদি বর্ষাযাপন করতে চান, তবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট হবে আপনার জন্য সেরা একটি গন্তব্য। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট। সমগ্র বিশ্বের ২২টি মিঠাপানির জলাবনের মধ্যে এটি একটি। রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ এবং ‘বাংলার আমাজন’ নামেও পরিচিত। যা বর্ষায় নিজের প্রকৃত রূপে ধরা দেয়। বর্ষার সময় পুরো বনটাই পানিতে তলিয়ে যায়, তখন ছোট ছোট নৌকা নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। পানির নিচে ডুবে থাকা এ বনে পাখির ডাক অদ্ভুত এক অনুভূতি দেয়। অনেকেই বর্ষায় শুধু বৃষ্টিতে ভিজতেই ছুটে আসেন এখানে। এ বনের আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ একরের কাছাকাছি। রাতারগুলের বনাঞ্চলজুড়ে রয়েছে হিজল, বেত, কদমসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছ। সিলেট শহর থেকে সড়কপথে সরাসরি এখানে যাওয়া যায়।

নাফাখুম ঝরনা, বান্দরবান
বর্ষায় পাহাড়ি ঝরনাগুলো হয়ে ওঠে আরও উত্তাল। আর তেমনই একটি ঝরনা হলো নাফাখুম। বান্দরবানের থানচি থেকে প্রায় চার ঘণ্টার ট্রেকিং করে যেতে হয় এখানে। মাঝখানে পড়বে রিমাক্রি নদী, যেখানে আপনাকে ছোট নৌকায় করে যেতে হবে। ঝরনার পানির প্রবাহ বর্ষায় সবচেয়ে বেশি থাকে, আর সেই তীব্র স্রোত ও গর্জনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আপনাকে একধরনের অদ্ভুত অনুভূতি দেবে। চারদিকে সবুজ পাহাড় আর মাঝখানে সাদা স্রোতের তীব্র ঝাপটা, এ দৃশ্য চিরকাল মনে গেঁথে থাকার মতো আর সঙ্গে যদি থাকে ইস্পাহানি মির্জাপুর টি-ব্যাগ, তাহলে মুহূর্তটা হয়ে উঠবে আরও পরিপূর্ণ, আরও ভরপুর। যাঁরা একটু অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য বর্ষার নাফাখুম একটি আদর্শ গন্তব্য। তবে এখানে বর্ষায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা জরুরি। কারণ, বৃষ্টির ফলে নদীতে স্রোত বেড়ে যায়, ট্রেকিংয়ের পথ পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই উপযুক্ত প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে নেয়া জরুরি।

আপন দেশ/এমবি

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়