ফাইল ছবি
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকেবি) অধ্যাদেশের খসড়ার স্কুলিং পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সামনে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) রাজধানীর শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অথবা তার সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধীনে সরকারি সাত কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করার দাবিটি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং শিক্ষার্থীসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। সাত কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি দিনও নষ্ট হোক তা চান না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা রাজপথ থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুক-এটি যেমন অভিভাবকদের প্রত্যাশা, তেমনি সাত কলেজের শিক্ষকদেরও কামনা। শিক্ষকরা ক্লাস নেয়ার জন্য প্রস্তুত ও অপেক্ষমাণ। কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশ শিক্ষকদের সে এখতিয়ার দেয়নি; কারণ খসড়া অনুযায়ী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সাত কলেজের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। চূড়ান্ত অধ্যাদেশ, সিলেবাস ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারিত না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন।
৫ দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, ৩ ডিসেম্বর সারাদেশের সকল সরকারি কলেজে মানববন্ধন ও প্রেস ব্রিফিং। ৪ ডিসেম্বর পাবলিক পরীক্ষা বন্ধসহ সাত কলেজে সর্বাত্মক কর্মবিরতি। ৬ ডিসেম্বর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সারা দেশের সকল সদস্যের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ করা হবে এবং যদি ঢাকার ৭ কলেজের অন্যতম প্রধান অংশীদার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মতামত ও দাবি উপেক্ষা করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সকল সরকারি কলেজ ও দফতরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি (টোটাল শাট ডাউন) শুরু হয়ে যাবে।
এদিকে প্রস্তাবিত মডেলের সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় মডেল সরকারি কলেজগুলোর সক্ষমতা সংকোচনের ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক সমতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারি কলেজে আসনসংখ্যা কমে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে উচ্চ ফি-নির্ভর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হবেন ফলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ত্বরান্বিত হবে। অথচ জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ উচ্চশিক্ষার প্রসারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন<<>>দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা
অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশের ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিতেই অধ্যাদেশ, সিলেবাস, অবকাঠামো ও প্রশাসনিক কাঠামো চূড়ান্ত না করে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার দৃষ্টান্ত নেই। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একাডেমিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগে কলেজ কর্তৃপক্ষের শ্রেণিকার্যক্রম শুরু করারও কোনো এখতিয়ার নেই। বিদ্যমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৩টিতে এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি এবং ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ভাড়া বাড়ি বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। এ অবস্থায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে হাইব্রিড ও স্কুলিং নির্ভর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের-২.০ (বিওইউ ২.০) মডেল চাপিয়ে দিলে তা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে নয়; বরং বিশেষ গোষ্ঠীর কায়েমি স্বার্থের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, অংশীজনদের মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই শ্রেণিকার্যক্রম শুরুর নোটিশ প্রদান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অধ্যাদেশের ৬ এর ২(ক) ধারায় বলা আছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হইবার পূর্বে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজসমূহের বিরাজমান পরিচয়, বৈশিষ্ট্য, অবকাঠামো ও অন্যান্য বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা অক্ষুণ্ণ থাকিবে শুধু তাই নয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহৃত ‘উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা’ বাক্যাংশটি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কাঠামো বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে, যা সাত কলেজ ইস্যুকে আরও জটিল করবে।
মাহফিল আরা বেগম বলেন, রাষ্ট্রের মাথাপিছু ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বঞ্চিত। এমনকি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয় করা হয়। সাত কলেজসহ দেশের সকল সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীর জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ বৃদ্ধি, আবাসন পরিবহন সুবিধা, শিক্ষক সংকট ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার স্বার্থে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর সর্বস্তরে স্থায়ীভাবে কেবলমাত্র বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। প্রস্তাবিত নামটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্ধারণ করে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































