
প্রতীকী ছবি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত এ বাজেটে রাজস্ব আদায় ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বেশ কিছু পণ্যের ওপর কর, শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এর প্রভাবে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উত্থাপিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে এ তথ্য জানা যায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক শিল্পে ব্যবহৃত সিগারেট পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে সিগারেটের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদন ও সংযোজন পর্যায়ে ভ্যাট হার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উৎপাদনের ধরন অনুযায়ী ২ থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি মোবাইল ফোনের দামে পড়তে পারে।
ফ্রিজ ও এসি উৎপাদনে বর্তমানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট থাকলেও, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরে এখন ১ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। ফলে এ রিকশার দাম বাড়বে, বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেখানে এসব যানবাহন ব্যাপকহারে চলাচল করে।
মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও তার সুফল বাজারে খুব একটা দেখা যায়নি। এবারের বাজেটে এসব যন্ত্রাংশে আবারও কর বাড়ানোর প্রস্তাব থাকায় দাম বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্মাণ খাতে রড ও স্টিলের দাম বাড়তে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রড উৎপাদন ও আমদানিতে ভ্যাট ২০ থেকে ২৩ শতাংশ করার চিন্তা রয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যমান ফিক্সড আমদানি শুল্ক তুলে নেয়ার প্রস্তাবও আসতে পারে। এতে প্রতি টনে রডের দাম প্রায় ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে অনুমান।
কসমেটিক্স পণ্যে বাড়তি খরচ পড়বে। নারীদের ব্যবহৃত লিপস্টিক, আইলাইনার, ফেসওয়াশসহ নানা মেকআপ সামগ্রীর আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি কেজি লিপস্টিকের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সেলুনে ব্যবহৃত ব্লেড তৈরিতে ব্যবহৃত স্টেইনলেস ও কার্বন স্টিল স্ট্রিপের ওপর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে ব্লেডের দাম বাড়তে পারে।
গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, টয়লেটসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা থাকায় এসব সামগ্রীর বাজারমূল্য বাড়বে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে করে চা-কফি কাপ, প্লাস্টিক প্লেট ও বাটির মতো সামগ্রীর দাম বাড়বে। তবে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হবে না বলে জানা গেছে।
দেশে উৎপাদিত সুতায়ও ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি কেজি কটন ও মেন-মেইড ফাইবারে তৈরি সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করার প্রস্তাব থাকছে, যার ফলে গামছা, লুঙ্গি ও অন্যান্য পোশাকের দাম বাড়তে পারে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে হেলিকপ্টার আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। ফলে হেলিকপ্টার আমদানির খরচ বাড়বে যদিও বর্তমানে এ ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক নেই।
বিদেশি চকলেট আমদানিতে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করার প্রস্তাব থাকছে, যার ফলে সব ধরনের আমদানিকৃত চকলেটের দাম বেড়ে যেতে পারে।
স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে খেলনার দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি শুল্ক ও কর বৃদ্ধির কারণে আরও যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-তারকাঁটা, স্ক্রু, নাট-বোল্ট, বৈদ্যুতিক লাইনের হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, তামাক বীজ ও দরজার তালা।
এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। এটি দেশের ৫৪তম, অন্তবর্তীকালীন সরকার ও অর্থ উপদেষ্টার প্রথম বাজেট।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।