
সংগৃহীত ছবি
পটুয়াখালীতে এক চা বিক্রেতাকে ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদ’ হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনুদানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন তদন্ত শেষে বশির সরদার নামের ওই ব্যক্তির নাম জুলাই শহীদদের তালিকা থেকে বাতিলের সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে শহীদ পরিবারের নামে বরাদ্দ করা সরকারি অনুদান ও সঞ্চয়পত্রও স্থগিত করা হয়েছে।
বশির সরদার (৩৭) পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিসাখালী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের একজন চা বিক্রেতা ছিলেন। ২০২৪ সালের জুন মাসে তিনি পায়ে রডের আঘাতে গুরুতর আহত হন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকায় তার আঘাতের স্থানে সংক্রমণ হয় ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় নভেম্বর মাসে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে অনুদান আসতে থাকে।
শহীদ পরিবার হিসেবে পাওয়া অনুদানের টাকা নিয়ে পরিবারে শুরু হয় চরম দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে পরিবারের এক সদস্য জেলা প্রশাসককে ফোন করে পুরো ঘটনা ফাঁস করে দেন। এর পরই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন>>>খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কাল দোয়া-মিলাদ কর্মসূচি
সম্প্রতি সরকার সারাদেশে জুলাই শহীদদের মৃত্যুর স্থান সংরক্ষণের নির্দেশ দিলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তখন ২৪ জন শহীদের মধ্যে বশির সরদারের পরিবারের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরিবার দাবি করে, বশির পটুয়াখালী শহরের চৌরাস্তায় আহত হয়েছিলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই আন্দোলনে পটুয়াখালীতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানান, তিনি বশির সরদারের স্ত্রী রেবা আক্তার ও তার ভাই নাসির সরদারকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জেরার মুখে তারা সত্য কথা স্বীকার করেন।
বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার জানান, তার স্বামী ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। রডের আঘাতে আহত হওয়ার পর সংক্রমণের কারণে তার মৃত্যু হয়। অর্থাভাবে পড়ে গেলে স্বামীর ভাই নাসির সরদার সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করেন।
নাসির সরদারও সাংবাদিকদের কাছে ভুল স্বীকার করে জানান, পরিবারের আর্থিক অনটন ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তিনি ভাইয়ের নাম জুলাই শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন জেলা প্রশাসকের কাছে তালিকা থেকে নাম বাতিলের অনুরোধ করেছি।
জেলা প্রশাসক জানান, বশির সরদারের গেজেট বাতিলের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে তার স্ত্রীর নামে দেওয়া ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে। এ সঞ্চয়পত্র থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও বাকি টাকা আটকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, পটুয়াখালী জেলা পরিষদ থেকে শহীদ পরিবারকে দেয়া ২ লাখ টাকাও পরবর্তীতে আদায় করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।