
ছবি: আপন দেশ
পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। একপাশে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্ণা, আর অন্যপাশে পাথুরে নদী এ জায়গাটির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। সম্প্রতি নজিরবিহীন ও বেপরোয়া লুটের কারণে অনেকটা পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে দর্শনীয় স্থানটি।
অবশেষে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন এলাকার লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধারে বৃহৎ অভিযানে নামে যৌথবাহিনী। জব্দকৃত পাথর পুনরায় নিজ নিজ স্থানে প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। রাতভর সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ—ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে মহাসড়কে বিশেষ তল্লাশী চালিয়ে বহু পাথরবাহী ট্রাক আটক করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এ পর্যটন কেন্দ্র রক্ষায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে সিলেটের সাদাপাথর পর্যটন এলাকার লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধারে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানের শুরুতেই বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তৎপরতায় ভোলাগঞ্জের কালাইরাগ এলাকায় জব্দ করা হয় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর।
জব্দকৃত পাথর আবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিস্থাপনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সাদাপাথরে। বারকি নৌকা করে পাথর শ্রমিকরা রাতভর চালায় এমন কার্যক্রম।
প্রশাসনের এমন উদ্যোগে সামিল হন স্থানীয়রাও। তারা বলছেন, অতীতে যা ঘটেছে সেটির যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য প্রশাসনের সঙ্গে থেকে সাদাপাথর রক্ষায় কাজ করবেন তারাও।
আরওপড়ুন<<>>অক্টোবরে কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু
এদিকে মহাসড়কেও যাতে ট্রাকে করে লুণ্ঠন হওয়া পাথর না নিয়ে যেতে পারে, সেজন্য সিলেট ভোলাগঞ্জ সড়কে রাত ৮টা থেকেই অভিযানে নামে সেনাবাহিনী।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলা বিশেষ তল্লাশিতে প্রতিটি ট্রাকের পাথর নামিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে রাতভর। সেনাবাহিনী বলছে, লুট হওয়া পাথর উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিলেট সেনা নিবাসের ৩৪ বীর মেজর মো. রাজিব হোসাইন বলছেন, এরই মধ্যে চুরি হওয়া পাথর অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রমাণও মিলেছে। যেসব পরিবহনে সাদা পাথর পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো জব্দ করে অভিযান শেষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া শুধু পাথর উদ্ধার নয় বরং এ লুটের সঙ্গে যারাই জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকেও দ্রুতই আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথাও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এর আগে সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউজে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা আগামী রোববার (১৭ আগস্ট) প্রতিবেদন দেবে।
প্রশাসনের পাঁচ দফা সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- জাফলং ইসিএ ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী মোতায়েন, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন, অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার এবং চুরি হওয়া পাথর আগের স্থানে ফিরিয়ে আনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে লাগামহীন লুটপাট চলছে। প্রতিদিন শতশত নৌকায় পাথর পাচার হওয়ায় আগের জৌলুস হারিয়েছে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটন স্পট।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।