
ছবি: আপন দেশ
যশোরে ‘জুলাই বিপ্লব’-এ আহতদের অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা, হট্টগোল ও শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। তালিকায় ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ তুলে অনুদান বিতরণ স্থগিত রাখার দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
বাধা উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসক চেক বিতরণ শুরু করলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন— ‘আপোষ না, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দালালি না, রাজপথ রাজপথ!’
জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবস্থার অবনতি ঘটলে জেলা প্রশাসক, অতিথি ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
বুধবার (১৪ মে) দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর মিলনায়তনে ৬৬ জন ‘সি ক্যাটাগরি’ আহতদের মাঝে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে চেক বিতরণের জন্য এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানের শুরুতেই উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা মুখ্য সংগঠক আল মামুন লিখন ও ফাহিম আল ফাত্তাহ সরাসরি অভিযোগ করেন— চেকপ্রাপ্তদের তালিকায় ভুয়া নাম রয়েছে। প্রকৃত আহতদের অনেকেই বাদ পড়েছেন। অথচ কিছু প্রভাবশালী ও সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অনেককেই ঘটনাস্থলে কখনো দেখাই যায়নি। কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রমাণ ছাড়াই ‘আহত’ হিসেবে স্থান পেয়েছেন। এভাবে ভুয়া নাম ঢুকিয়ে দিলে প্রকৃত শহীদ ও আহতদের প্রতি অবিচার হবে।
তারা আরও বলেন, যেভাবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছিল, এখন তেমনভাবে তৈরি হচ্ছে ভুয়া আহত ও শহীদদের তালিকা। ৫ আগস্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২২ জনের একটি তালিকা থাকলেও তা উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তালিকা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
আরও পড়ুন>>>ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ২ ভুয়া র্যাব আটক
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এ তালিকা জেলা প্রশাসন তৈরি করেনি। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ৬৬ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভুল থাকলে তা পরে সংশোধন ও নতুন সংযোজন সম্ভব।
তবে ছাত্ররা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে নিজেরাই কিছু সাংবাদিক ও স্থানীয়দের নাম উল্লেখ করে বলেন, এ ব্যক্তিরা ঘটনার সময় মাঠে ছিলেন না। তাদের আহত হওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। শহীদদের নামেও তালিকা অস্পষ্ট। যাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তাদের কেউ কেউ প্রকৃত শহীদ কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ৫৬ জনের মধ্যে শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে মাত্র ২৩ জনকে— যা তারা ‘অত্যন্ত অসম্পূর্ণ ও বিতর্কিত’ বলে অভিহিত করেন। শুধু মৃত্যুই যদি শহীদের মানদণ্ড হয়, তাহলে ৫৬ জনের সবাইকেই শহীদ ঘোষণা করা উচিত।
পরিস্থিতি শান্ত না হলেও জেলা প্রশাসক চেক বিতরণ শুরু করেন। তখনই শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একযোগে স্লোগান দিতে থাকেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের মতে, এ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে প্রকৃত আহতদের মর্যাদা হরণ হবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করেন যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য রামিম, এনসিপির সদস্য সোয়াইয়ুব, সাংবাদিক নেতা আকরামুজ্জামান, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাকিব রাসেল। তারা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকে।
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসক, আমন্ত্রিত অতিথিরা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা মিলনায়তন ত্যাগ করেন। চেক বিতরণ আংশিকভাবেই সম্পন্ন হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা সমন্বয়ক রাশেদ খান জানান, এ ঘটনার প্রতিবাদে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা আহতদের সঙ্গে বেঈমানি হতে দেব না। সঠিক যাচাই-বাছাই না হওয়া পর্যন্ত বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।