Apan Desh | আপন দেশ

১০ মাসে আইপিওশূন্য শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১৭ জুন ২০২৫

১০ মাসে আইপিওশূন্য শেয়ারবাজার

ফাইল ছবি

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরে বেশ খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ মাস শেয়ারবাজারে কোনো নতুন কম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন হয়নি। যদিও আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সূচকের সাময়িক উত্থান হয়েছিল।

তবে সরকার বদলের পর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি।বিদ্যমান সংকটেরও যেন কোনো সমাধান নেই। এ কারণে বাজার কেবলই দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে।

তিনি কাজে যোগ দেয়ার ১০ মাস হলেও শেয়ারবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা বেড়েছে। বাজারের লেনদেন তলানিতে নামা, বড় অঙ্কের সূচকের পতন ঘটা থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার সময় কাটছে। এর মধ্যে নতুন করে কম্পানি শেয়ারবাজারে না আসা যোগ করেছে হতাশার নতুন মাত্রা।

খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত একটিও আইপিও অনুমোদন করা হয়নি। বরং এ সময়ে বাতিল করা হয়েছে ১৭টি কম্পানির আইপিও আবেদন, যা শেয়ারবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

বিএসইসি ও ইস্যু ম্যানেজার সূত্রগুলো বলছে, গত পাঁচ বছরে শেয়ারবাজার থেকে উদ্যোক্তারা যেভাবে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছেন, তা দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বিশেষ করে ২০১৯-২০২৩ সময়ে অনেক কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে বড় অঙ্কের পুঁজি সংগ্রহ করে। কিন্তু ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০২৪ সালের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এ প্রবাহ একেবারেই থেমে যায়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে শেয়ারবাজার থেকে এক টাকাও সংগ্রহ করতে পারেনি কোনো কম্পানি। শেয়ারবাজারের যে দুটি অবস্থান অর্থাৎ প্রাথমিক শেয়ারবাজার এবং দ্বিতীয় স্তরের শেয়ারবাজার, উভয় খাতেই মারাত্মক স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রাথমিক শেয়ারবাজার মূলত এমন একটি অবস্থান, যেখান থেকে আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) শেয়ার বিক্রি করে কম্পানি মূলধন সংগ্রহের সুযোগ পায়। একটি লিমিটেড কম্পানি যে পদ্ধতিতে প্রথমেই জনগণের মাঝে শেয়ার বিক্রি করে প্রাথমিক মূলধন সংগ্রহ করে, সেটিই হচ্ছে প্রাথমিক শেয়ারবাজার বা প্রাইমারি মার্কেট।

পক্ষান্তরে কম্পানির ইস্যু করা আইপিও শেয়ার যেখানে বা যে পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় বা হাতবদল হয়, সেটিই হচ্ছে দ্বিতীয় স্তরের শেয়ারবাজার বা সেকেন্ডারি মার্কেট। দেশের স্টক মার্কেট হচ্ছে শেয়ারবাজারের দ্বিতীয় স্তরের বাজার। শেয়ারবাজারের জন্য দুটি পদ্ধতি অর্থাৎ প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি মার্কেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার বলতে স্টক মার্কেটকেই বুঝে থাকে।

বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটে মন্দা অবস্থা বিরাজ করলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্টক মার্কেটের মন্দা অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রাইমারি মার্কেট যেহেতু আইপিও শেয়ারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই সংখ্যায় কম আইপিও বাজারে এলে সেখানে মন্দা অবস্থা বিরাজ করে। কম আইপিও আসার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছু লাভ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু এ কারণে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন না। আইপিও বাজার মন্দা থাকলে বিনিয়োগকারীদের চেয়ে উদ্যোক্তা বা কম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বেশি খারাপ অবস্থায় থাকে।

কারণ তারা শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের ব্যবসার অগ্রগতি থমকে যায়। প্রাইমারি মার্কেটের ঠিক উল্টা অবস্থা বিরাজ করে স্টক মার্কেটে। কারণ স্টক মার্কেটে মন্দা অবস্থা থাকলে উদ্যোক্তা বা কম্পানির তেমন কোনো সমস্যা হয় না বললেই চলে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন যখন দেশের স্টক মার্কেটে মন্দা অবস্থা বিরাজ করে।

বিএসইসির সূত্র অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে সবশেষ এক বছর আগে আইপিও অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি। ২০২৪ সালে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করা চার কম্পানির মধ্যে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও টেকনো ড্রাগস। চারটি কম্পানি আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এরপর আর কোনো কম্পানির আইপিও অনুমোদন হয়নি।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়