Apan Desh | আপন দেশ

রাবির নীল-সাদা বাসের জগৎ যেন প্রেমময় কবিতা

মো. রাফাসান আলম, রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ১৩ জুন ২০২৫

আপডেট: ১৪:২৭, ১৩ জুন ২০২৫

রাবির নীল-সাদা বাসের জগৎ যেন প্রেমময় কবিতা

ছবি : আপন দেশ

রূপের রাজ্যে অমলিন এক পশলা স্নিগ্ধতা নিয়ে রাণী হয়ে অনবদ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আর এ রাণীর রাজ্যের প্রধান আকর্ষণ নীলা-সাদা বাসগুলো। মতিহারের ধুলোমলিন পথ, ক্যাম্পাসের ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজি, লাল-সোনালি দেয়াল আর সবুজ মাঠের মাঝে যেন জীবন্ত ছন্দ হয়ে চলাফেরা করে এ বাসগুলো। যা কেবল বাহন নয় বরং হাজারো গল্প, অজস্র স্মৃতি, প্রথম প্রেম, বন্ধুত্ব আর আবেগের নীরব সঙ্গী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে এক বিশাল জায়গা জুড়ে আছে এ নীল-সাদা বাসগুলো। কেউ বলে 'স্বপ্নের সাথী', কেউ বা 'প্রেমের প্রথম ছোঁয়া'। কেউ হয়তো তীব্র রোদে ক্লান্ত শরীর নিয়ে তাতে উঠেই পায় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি। আবার কেউ হয়তো বাসের জানালায় ভেসে যাওয়া প্রকৃতির দৃশ্যের ভেতর নিজের জীবনের গল্প খোঁজে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের তথ্যমতে, বর্তমানে পরিবহন বিভাগে রয়েছে মোট ৩০টি বাস, যার মধ্যে ২২টি প্রতিদিন ১৪টি রুটে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করে। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে প্রথম বাস ছাড়ে, এরপর একে একে সাদা-নীল রঙের ঝকঝকে গায়ে আরও তিনটি ট্রিপ ভেসে চলে রঙিন নগরীর পথে পথে।

কিন্তু এসব শুধু তথ্য নয়, প্রতিটি ট্রিপ, প্রতিটি হর্নের আওয়াজ যেন একেকটি অদৃশ্য কবিতার পঙক্তি। যখন সকালে দলবেঁধে ক্যাম্পাস চত্বরে নীল-সাদা বাসগুলো একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকে, তা যেন এক ঝাঁক ষোড়শী রমণীর মতো স্নিগ্ধ, গর্বিত আর অহংকারে ভরপুর। আর শিক্ষার্থীরা? তারা যেন সে প্রেমিক, যে প্রেমিকার আশায় প্রহর গোনে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া তানজীম নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকেই নীল-সাদা বাসের প্রতি একধরনের মোহ কাজ করতো। বাসের ছবিগুলো ফেসবুকে দেখতাম আর ভাবতাম— কবে যে এর যাত্রী হবো! ভর্তি হওয়ার পর, প্রথমদিনেই একটা ছবি তুলেছিলাম বাসের সামনে। সেটা এখনো আমার প্রোফাইল কাভারে আছে। এ বাস কেবল যাতায়াতের জন্য নয়, এটা আমার আত্মপরিচয়ের অংশ। যখন বাস ছাড়ে, আর জানালা দিয়ে শহরের এলোমেলো রাস্তা পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাই, মনে হয় আমি নিজেকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ আলভী বলেন, প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে যখন ক্যাম্পাসে আসি, তখন এ বাসগুলোর মাঝেই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভাবতাম, এ বাসে চড়তে পারা যেন একপ্রকার বিজয়। একদিন উঠতে পারলেই, মন যেন পূর্ণ হয়। রীতিমতো একটা রোমান্টিক বন্ধন তৈরি হয়ে যায় এর সঙ্গে। কণ্ঠে ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসার সুর। প্রথমবার বাসে চড়ে জানালার পাশের সিটে বসে যখন হাওয়া এসে গাল ছুঁয়ে গেল, মনে হয়েছিল— এ বাস শুধু বাহন নয়, এ যেন জীবনের একটা পরিপূর্ণ অনুভব।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, নীল-সাদা বাসে ওঠা মানে শুধু গন্তব্যে পৌঁছানো নয়, এ যেন প্রতিদিন একটি ছোট্ট ভ্রমণ কাহিনি। জানালার ধারে বসে যখন হাওয়া মুখে ছুঁয়ে যায়, আর পাশে বন্ধুদের হাসি, গল্প আর গানের ছন্দ বাজে তখন বাসটা হয়ে ওঠে চলন্ত মিলনমেলা; যেখানে স্মৃতি আর অনুভূতিরা একে একে সওয়ার হয়।

রাবির নীল-সাদা বাস হয়ে উঠেছে এক অনির্বচনীয় রোমান্সের প্রতীক। এরা কেবল বাহন নয় বরং সময়ের প্রিয় দলিল, হৃদয়ের নিবিড় নোটবুক, এক ঝলক স্বপ্ন। প্রেমিকা যেমন শত মানুষের মাঝে একজনের চোখে সবচেয়ে অনন্য হয়ে ওঠে, তেমনি এ বাসও হাজার যানবাহনের মাঝে রাবি শিক্ষার্থীদের চোখে সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে মায়াময়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ক্লান্ত দুপুর, স্নিগ্ধ সকাল বা উদাস বিকেল, সবকিছুর ছায়াতলে থেকে যায় একটিই বাহন নীল-সাদা প্রেম। এ এক অনুভব, এক নীরব প্রেম, যা শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে প্রতিদিন নতুন করে লেখা হয়।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ