বাংলাদেশের দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল
ইংলিশ চ্যানেলের নাম আসলেই মনে পড়ে যায় ব্রজেন দাসের কথা। এ বাংলাদেশি ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী প্রথম এশীয়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে মোট ছয়বার চ্যানেলটি অতিক্রম করেন তিনি। এ চ্যানেল সবচেয়ে কম সময়ে সাঁতারে পার হওয়ার রেকর্ডও গড়েছিলেন তখন।
এরপর ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক ও ১৯৮৮ সালে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মোশাররফ হোসেন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়া যে কোনো সাঁতারুর জন্যই আজন্ম লালিত স্বপ্ন। কখনও নির্ধারিত স্লট পাওয়া যায় না। কখনও এটা সাঁতারুদের জন্য হয়ে পড়ে ব্যয়বহুল। কিন্তু এত কিছুর পরও যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে বিভক্ত করা আটলান্টিক মহাসাগরের এ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার সুযোগ হয়, তাহলে সেটা সে সাঁতারুর জন্য রোমাঞ্চকর এক ঘটনা বলা যায়।
মোশাররফ হোসেনের পর আরও দুই বাংলাদেশি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার রোমাঞ্চকর অভিযানে নামতে যাচ্ছেন। তারা হলেন মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল। আগামী ৭ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যুক্তরাজ্য যাবেন এই দুই সাঁতারু। সেখানে গিয়ে অন্তত ১০ দিন অনুশীলন করবেন দুজন।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য স্লট পাওয়া দুষ্কর। জেলিফিস, ঠান্ডা পানি ও প্রাকৃতিক বৈরিতার পাশাপাশি ব্যয়ও অনেক। এরপরও পেশাদার ও সৌখিন সাঁতারুরা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে বিভক্ত করা ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের নেশায় মাতেন। এবার সে রোমাঞ্চকর অভিযানে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল।
গত কয়েক বছর ধরেই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অলিম্পিয়ান সাঁতারু সাগর। তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন হিমেলকে। যিনি বর্তমানে চীন প্রবাসী। সাঁতার অঙ্গনে অবশ্য তার খুব তারকাখ্যাতি ছিল না। সাগর ও হিমেল রিলেতে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবেন। তাদের দুই জনের সঙ্গী দুই ভারতীয় সাঁতারু ইলভিস আলী হাজারিকা ও রিমো সাহা। দুই ভারতীয় সাঁতারুর সঙ্গে রিলে করার কারণ সম্পর্কে সাগর বলেন, ভারতীয় দুই সাঁতারুর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। রিলেতে তুলনামূলক ব্যয় কম।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে একজন সাঁতারুর প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন থেকেও তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের দুই সাঁতারু মূলত ২০২৮ সালের আগে ব্যক্তিগত কোনো স্লট পাচ্ছিলেন না। কলকাতার দুই সাঁতারুর সহযোগিতায় এ বছরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার সুযোগ মেলে তাদের। যে কারণে চার সাঁতারু মিলে একটা রিলে করবেন ইংলিশ চ্যানেলে।
অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু সেসবের জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা জানালেন হিমেল, ওখানে জেলি ফিশ আছে। পানির তাপমাত্রা সেখানে ১৫ থেকে ১৯ ডিগ্রি। তবে আমি চীনে ১৯ ডিগ্রিতে সাঁতার কেটেছি। খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে ১৫ ডিগ্রি হলে চ্যালেঞ্জিং থাকবে।
ইংলিশ চ্যানেলের প্রস্তুতি সম্পর্কে কিশোরগঞ্জের এ সাঁতারু বলেন, প্রায় ৩৭ বছর পর ব্রজেন দাস স্যার এবং মোশাররফ হোসেন স্যারের পর আমরা দুজন বাংলাদেশি যাচ্ছি। নিঃসন্দেহে এটা একটা ব্রেকথ্রু। যা গর্বের বিষয় এবং আশা করি, এখন যে প্রজন্ম আছে তারাও আমাদের থেকে অনুপ্রেরণা পাক।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে সাঁতারুদের ৪০-৫০ কিলোমিটার সাঁতরাতে হয়। স্রোত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ১০-১৫ ঘণ্টাও লাগে। চারজনের রিলে হওয়ায় একেক জনের ৪ ঘণ্টার বেশি পানিতে থাকতে হবে। সাগর ও হিমেলের ৩ ঘণ্টার মতো পানিতে টানা থাকার রেকর্ড রয়েছে।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার কিছু গাইডলাইন রয়েছে। সেটা ভঙ্গ হলে অকৃতকার্য হবেন সাঁতারুরা, ফলে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য ব্যয় গচ্চাই যাবে, তেমনটা হলে পুনরায় আবার নতুন স্লটের জন্য আবেদন করতে হবে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।
