
প্রতীকী ছবি
গত এক দশকে ইউটিউব শুধু বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নয়; বরং স্বাধীনভাবে কাজ করার একটি বড় মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অসংখ্য তরুণ-তরুণী ও সৃজনশীল মানুষ এখানে নিজেদের ভাবনা, দক্ষতা ও জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে আয় করার পথ গড়ে তুলেছেন।
অনেকেই নিয়মিত ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবের নীতিমালার শর্ত পূরণ করে মনিটাইজেশনের আবেদন করেন। তবে নানা কারণে তা অনুমোদিত হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ একবার মনিটাইজেশন সুবিধা পেলেও পরবর্তী সময়ে সেটি হারিয়ে ফেলছেন। তাই ইউটিউব মনিটাইজেশন কোন কারণে বন্ধ করে দিতে পারে, তা জানা জরুরি।
১. কপিরাইট লঙ্ঘন
ইউটিউব কপিরাইট নীতির প্রতি অত্যন্ত কঠোর। অনুমতি ছাড়া অন্যের ভিডিও ক্লিপ, গান, সিনেমার অংশ বা সাউন্ড ইফেক্ট ব্যবহার করলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসতে পারে।
যদি একটি চ্যানেলে একাধিক কপিরাইট স্ট্রাইক আসে, তাহলে চ্যানেলটি মনিটাইজেশন হারাতে পারে, এমনকি চ্যানেল পুরোপুরি বন্ধও হতে পারে।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করলেও সেটি হতে হবে লাইসেন্সযুক্ত বা বৈধভাবে কেনা, তা না হলে সেটিও কপিরাইট লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে।
২. কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘন
ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইনের মধ্যে রয়েছে কিছু স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা। হয়রানি, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, কাউকে আক্রমণ করা, সহিংসতা বা অশালীন উপস্থাপন—এসব কিছুই গাইডলাইন ভঙ্গের মধ্যে পড়ে।
এ ছাড়া ‘ঘৃণা ছড়ানো’, ‘বিপজ্জনক আচরণ’ এবং ‘অশ্লীল থাম্বনেইল’ থাকলে ভিডিও ডিমোনিটাইজড হয়ে যেতে পারে, এমনকি পুরো চ্যানেলও। সে সঙ্গে ভিডিওতে মাদকসম্পর্কিত তথ্য থাকলেও মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩. অন্যদের কনটেন্ট ব্যবহার
ইউটিউব চায় নির্মাতারা মৌলিক এবং স্বতন্ত্র কনটেন্ট তৈরি করুক। আপনি যদি শুধু অন্যের তৈরি ভিডিও, সংকলন, টেলিভিশন ক্লিপ বা গান একত্র করে আপলোড করেন, তবে ইউটিউব সেটিকে ‘রিইজড কনটেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে মনিটাইজেশন বাতিল করে দিতে পারে।
এমনকি আপনি যদি ভিডিওটি সম্পাদনা করেন বা ব্যাকগ্রাউন্ডে কথা বলেন, তবুও যদি মৌলিকতা না থাকে, সেটি মনিটাইজযোগ্য হবে না।
৪. অ্যাডসেন্স ও মনিটাইজেশন নীতিমালা লঙ্ঘন
আপনার ভিডিওর কনটেন্ট যদি অ্যাডসেন্সের জন্য অনুপযুক্ত হয়—যেমন সহিংস, বিভ্রান্তিকর বা চটকদার (ক্লিকবেইট) —তাহলে মনিটাইজেশন বাতিল হতে পারে।
অ্যাডসেন্সের নিয়ম ভাঙা বা ভুয়া ট্রাফিক ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। নিজের মালিকানা না থাকা ভিডিও মনিটাইজ করতে গেলে ইউটিউব পেমেন্ট আটকে দিতে পারে।
৫. বিজ্ঞাপন নীতিমালা লঙ্ঘন
কোনো ভিডিও যদি ইউটিউবের বিজ্ঞাপন নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য না রাখে, তবে তা ‘লিমিটেড বা নো অ্যাডস’ স্ট্যাটাস পায়। যেমন: রাজনৈতিক বিতর্ক, সংবেদনশীল ঘটনা, অশ্লীল ভাষা বা হিংসাত্মক দৃশ্য।
ফলে ভিডিওতে খুব কম বিজ্ঞাপন দেখানো হয় বা একেবারেই দেখানো হয় না, ফলে আয়ও প্রায় থাকে না বললেই চলে।
৬. বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ও ক্লিকবেইট সমস্যা
ইউটিউব চায় তার দর্শক যেন বিশ্বাসযোগ্য কনটেন্ট পান। বিভ্রান্তিকর থাম্বনেইল, ভুয়া তথ্য বা ‘বাজে শিরোনাম’ ব্যবহার করলে মনিটাইজেশন বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। উদ্দেশ্যহীন বা নিচু মানের ভিডিওও ইউটিউবের চোখে পড়ে ও সেগুলো মনিটাইজযোগ্য থাকে না।
৭. কম এনগেজমেন্ট ও ইন-অ্যাকটিভ চ্যানেল
শুধু সাবস্ক্রাইবার ও ভিউয়ের ঘণ্টা পূরণ করলেই হবে না—ভিডিওতে দর্শকের সক্রিয় অংশগ্রহণ, লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার গুরুত্বপূর্ণ। যদি দীর্ঘ সময় ধরে চ্যানেলে কনটেন্ট না আসে বা দর্শকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি না হয়, তাহলে ইউটিউব সেটিকে সক্রিয় মনে করে না ও মনিটাইজেশন আটকে দিতে পারে।
এ ছাড়া গত ১৫ জুলাই থেকে মনিটাইজেশনের আরেক নীতিমালা যুক্ত করেছে ইউটিউব। এআই ব্যবহার করে তৈরি কিছু ধরনের ভিডিও মনিটাইশন হবে না। যেমন: এআই দিয়ে বানানো স্ক্রিপ্ট ও ভয়েস দিয়ে সরাসরি প্রকাশিত ভিডিও হুবহু একই ধরনের তথ্যভিত্তিক ভিডিও বারবার তৈরি ও বিভ্রান্তিকর এআই ভিডিও। তবে ভিডিওতে মানুষের নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা সৃজনশীল উপস্থাপন থাকে, তাহলে সেগুলো মনিটাইজেশন হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।