Apan Desh | আপন দেশ

আত্মশুদ্ধির শিখর হজ্জে বায়তুল্লাহ

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ৮ মে ২০২৫

আত্মশুদ্ধির শিখর হজ্জে বায়তুল্লাহ

ফাইল ছবি

হজ এ শব্দটির মাঝেই যেন লুকিয়ে আছে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি, এক হৃদয়বিধুর আহ্বান, এক আত্মার আর্তি। হজ মানে শুধু মক্কার পথে পদযাত্রা নয়, বরং এটি এক অন্তরযাত্রা প্রিয় প্রভুর দিকে, তার সান্নিধ্যের আশায়, ক্ষমা ও রহমতের সন্ধানে।

এ সফর শুরু হয় এক গভীর ভালোবাসা থেকে। সে ভালোবাসা কোনো দুনিয়াবি আবেগ নয়; বরং তা হলো محبة الله আল্লাহর প্রতি নিখাদ প্রেম, যে প্রেম বান্দাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় প্রিয় ঘরের দিকে, প্রিয় মালিকের দরবারে। আল্লাহর প্রেম: হজের প্রথম ও প্রধান অনুপ্রেরণা

যে ভালোবাসা মানুষকে আল্লাহর ঘরের পথে টেনে নেয়, সেটি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে, وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ আর মুমিনরা আল্লাহর প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা পোষণ করে। (সুরা আল-বাকারা: ১৬৫)

আল্লাহর প্রতি এ তীব্র ভালোবাসাই বান্দাকে উদ্বুদ্ধ করে ঘর-বাড়ি, পরিবার, সম্পদ, সব কিছু পিছনে ফেলে একটি ডাকের প্রতি সাড়া দিতে  লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক... কোরআনের দৃষ্টিতে হজ: প্রেমিকের সাড়া, প্রিয়জনের ডাক

হজ হলো হজরত ইবরাহিম আ.-এর আহবানের ফল। আল্লাহ তাকে বলেছিলেন وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ আর মানুষের মাঝে হজের আহ্বান ঘোষণা করো.. (সুরা হজ: ২৭)

ইবরাহিম আ. পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে এ আহবান করেছিলেন। তিনি জানতেন না কে সাড়া দেবে, কিন্তু প্রভু জানতেন— যে অন্তরে তার ভালোবাসা থাকবে, সে-ই সাড়া দেবে। যুগে যুগে সে দিকে সাড়া দিতে দিতেই মানুষ পায়ে হেঁটে, উটের পিঠে, বিমানে, কাফেলায় কাফেলায় হাজির হয় কা‘বার দরজায়।
 
হজের প্রতিটি রুকনে প্রকাশ পায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা

১. ইহরাম: নিজের পরিচয় বিসর্জন

দুনিয়ার সব পরিচয়, আরাম, আভিজাত্য ত্যাগ করে একজন মুমিন যখন ইহরামে আবৃত হয়, তখন সে যেন বলছে:“হে প্রভু! আজ আমি কেবল তোমার দাস; আমার কোনো অহংকার নেই, পরিচয় নেই, শুধু তোমার প্রেমে ডুবে আছি।

২. লাব্বাইক: প্রেমিকের উত্তরাধিকার ঘোষণা

"لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ...আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির...এইআহবানে থাকে আত্মসমর্পণ, আবেগ, ভালোবাসা আর কান্নার মিশ্রিত ধ্বনি — যেন একজন প্রেমিক তার প্রিয়জনের ডাকে জীবন উৎসর্গ করছে।

৩. তাওয়াফ: প্রেমে ঘূর্ণায়মান হৃদয়

প্রিয়তমের চারপাশে ঘুরপাক খায় প্রেমিকের মন। কা‘বার চারপাশে তাওয়াফ হলো সেই প্রেমিক হৃদয়ের ঘূর্ণায়মান আরাধনা — এক পরম ভালবাসায় আপ্লুত আত্মার গতি।

৪. সাফা-মারওয়ার সাঈ: বিশ্বস্ততা ও আত্মসমর্পণের দৃশ্য

হজরত হাজেরা আ.-এর দৌড় ছিল না কেবল পানির খোঁজে; তা ছিল সন্তানের প্রতি দায়িত্ব এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও ভালবাসার অনন্য নিদর্শন। আজও কোটি কোটি হজযাত্রী সে প্রেমভরা পদক্ষেপে নিজেদের মিলিয়ে দেয়।

৫. আরাফার ময়দান: প্রেমিক ও প্রিয়র মিলনস্থল

আরাফার দিন হলো হজের মূল দিন। এ দিন বান্দা আল্লাহর সামনে দাঁড়ায় কাঁদতে কাঁদতে, চোখে পানি, অন্তরে ব্যাকুলতা, হৃদয়ে প্রেম, যেন বলছে: হে আল্লাহ! আমি ফিরে যেতে চাই পাপমুক্ত হয়ে, তোমারই বান্দা হয়ে।

قال رسول الله ﷺ: الحج عرفة আরাফা হলো হজ। তিরমিজি: ৮৮৯

হাদিসের আলোকে: আল্লাহর মেহমানেরা কারা?

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الحُجّاجُ والعُمّارُ وفدُ اللهِ، إنْ دعَوْهُ أجابَهُم، وإنِ استغفَروهُ غفَرَ لهُم “হজ ও উমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। তারা আল্লাহকে ডাকলে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন, তারা ক্ষমা চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।” (সুনানু ইবনি মাজাহ: ২৮৯২, সহিহ)

তাদের এ মর্যাদা, এ অভ্যর্থনা কোনো আনুষ্ঠানিকতার কারণে নয় এটি আসে নিখাদ ভালোবাসা আর নিঃস্ব আত্মনিবেদনের কারণে। প্রেমের এ যাত্রা যেন সফল হয়। হজ একটি ইবাদত, একটি সফর, একটি আত্মশুদ্ধির মঞ্জিল। কিন্তু তার চেয়েও বড়, এটি একটি প্রেমের আহ্বান। যে অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা নেই, সে হয়তো সফরে যেতে পারে, কিন্তু হজের আসল স্বাদ পাবে না।

اللهم اجعلنا من المحبين لك، والمقبولين عندك، ومن وفدك المبارك، واجعل حجنا حجًا مبرورًا، وسعيَنا مشكورًا، وذنبنا مغفورًا. آمين.
 
আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়