Apan Desh | আপন দেশ

‘বিএনপি-এনসিপি ঐক্যের প্রয়োজন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

‘বিএনপি-এনসিপি ঐক্যের প্রয়োজন’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই প্রধান শক্তি হলো বিএনপি ও এনসিপি। এ দুই দলের মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।  এ মন্তব্য করেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ঐক্যের জন্য কিছু শর্তও তুলে ধরেছেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লিখেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আমরা বহুদিন ধরে ব্যক্তি ও দলের সংকট হিসেবে দেখার ভুল করেছি। এ সংকট বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার নয়, এটি এক গভীরতর রাষ্ট্রগত সংকট, যা ব্যক্তিনির্ভর ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে। পরিবারতন্ত্রের যে দুর্বলতা দীর্ঘদিন বিএনপিকে জর্জরিত করেছে, সে জায়গায় সংস্কারের পথ আমরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছি। ফলে বিএনপি যখন জনগণের কাছে তার ঐতিহাসিক আবেদন হারিয়েছে, তখন তারা অবলম্বন খুঁজেছে প্রতিষ্ঠানের ছায়ায়। তবুও আশা থাকে, নতুন প্রজন্ম যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তারা পরিবারতন্ত্রের গণ্ডি ভেঙে আবারও জনপদের রাজনীতিতে ফিরতে পারে। ভারতের কংগ্রেসও আজ একই পথ খুঁজছে: পরিবারতন্ত্রের শেকল ভেঙে পুনর্গঠিত হওয়ার পথ।

আরও পড়ুন>>>‘বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই নেই’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃত সংকট কোনো দল নয়, দুই ধারার আধিপত্যবাদ : মুজিববাদ ও মওদূদীবাদ। গত পাঁচ দশক ধরে ভারত–পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্সি যুদ্ধের এক দীর্ঘ ক্ষেত্র ছিল বাংলাদেশ, যার নিয়ন্ত্রণে ছিল কখনো মুজিববাদ, কখনো মওদুদীবাদ। এই দ্বৈত আধিপত্যের ফলে আমাদের রাষ্ট্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়েছে।

নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী লিখেন, ২০২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল এ প্রক্সি রাজনীতির দাসত্ব থেকে বের হয়ে সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মাণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিবির তার কিছু কল্যাণমূলক কাজের আড়ালে ছাত্রসমাজকে জামায়াতের হাতে তুলে দিল, কিছু পদ-পদবি ও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। ফলে দেশ আবারও পুরোনো প্রক্সি রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে ঠেলে দেয়া হলো। আজ দেশপ্রেমিক শক্তির সামনে একসাথে দুটি যুদ্ধ : ১. মুজিববাদ ও মওদুদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ২. একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের দায়ভার।

তিনি বলেন, এ দুই যুদ্ধ একা কোনো দল লড়তে পারবে না। বিএনপি ও এনসিপি—গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই শক্তির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন। তবে এ ঐক্যের শর্ত রয়েছে: বিএনপিকে তার পুরনো সীমাবদ্ধতা ও পরিবারতন্ত্রের ছায়া থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। আর যারা ভারতের প্রভাব-রাজনীতির দিকে ঝুঁকে আছে, তাদেরও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে। এনসিপি কোনো অবস্থাতেই এই দায়িত্ব থেকে পিছু হটবে না। আমাদের চারটি প্রশ্নে আপোষ নেই— * বাংলাদেশের পুনর্গঠন * সার্বভৌম মর্যাদা * ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ * নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্মান ঐক্য আসুক বা না-আসুক, এনসিপি জনগণের সঙ্গে নিয়ে এ আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পথ আটকে আছে দুই ফ্যাসিবাদী প্রক্সির হাতে, মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের আধিপত্যে। এই প্রক্সির শাসন কাঠামো ভেঙে আমরা যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক, সৎ, জাতীয় রাষ্ট্র গড়তে চাই, তবে প্রতিটি নাগরিককে এই ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের কাজে শামিল হতে হবে। এ লড়াই কেবল নির্বাচন বা ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মাকে পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই বাঁচাতে হবে তার রাজনীতিকে—প্রক্সির ছায়া থেকে।

আপন দেশ/এমবি
 

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়