Apan Desh | আপন দেশ

‘জলবায়ু ন্যায্যতা নয়, প্রয়োজন জলবায়ু সুবিচার’

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

‘জলবায়ু ন্যায্যতা নয়, প্রয়োজন জলবায়ু সুবিচার’

ছবি: আপন দেশ

জলবায়ু সংকটের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা শব্দটি আর যথেষ্ট নয়—এখন প্রয়োজন জলবায়ু সুবিচার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তা এখন আর শুধু পরিবেশগত বিষয় নয়; এটি একটি মানবাধিকার ইস্যু বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে 'ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত Climate Justice Assembly-2025 সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আরও পড়ুন<<>>আমাদের অনৈক্যই খুনীদের শক্তি: উপদেষ্টা ফারুকী

সম্মেলনের শুরুতে পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ঘোষণা দেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন , জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যে ক্লাইমেট ফাইন্যান্স দেয়ার কথা বলা হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণ হিসেবে দেয়া হয়, যা একটি স্পষ্ট অবিচার। আমরা যে ক্ষতির শিকার, তা আমাদের দোষে নয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের কেন ঋণ নিতে হবে?—প্রশ্ন তোলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর পরিবর্তন নয়, এটি একটি  দুর্যোগ। শিল্পায়নকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনা  এ দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের মাত্র প্রায় ০.৪ শতাংশের জন্য দায়ী, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে।

উপদেষ্টা বলেন, কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করে আমাদের অনেক সময় বিভ্রান্ত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়। খুব সহজভাবে নেট জিরো বলা হয়, কিন্তু নেট জিরো বলে আসলে কিছু নেই। ‘জিরো’-এর আগে ‘নেট’ বসার অর্থ হলো একটি প্লাস ও একটি মাইনাসের সমন্বয়, যেখানে কার্বন নিঃসরণ একদিকে বাড়তে পারে এবং অন্যদিকে কিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে জিরো কার্বন, কোনো বিভ্রান্তিকর শব্দ নয়। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ধোঁকা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, নেচার বেইজড সল্যুশন শব্দটিও আজ বিভিন্ন কর্পোরেট স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বসবাস ও সমাধান খোঁজার যে অভিজ্ঞতা জনগণের ছিল, সেটিকে এখন নানা প্রযুক্তি ও কৃত্রিম ধারণার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা প্রকৃত অর্থে নেচার বেইজড নয়।

মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের হাওড়, বাওড়, ওয়েটল্যান্ড ও বিভিন্ন জলাশয় আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবে এসব জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে ইলিশের দাম বাড়লে আমরা প্রতিবাদ করি, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সংকটের কারণে ইলিশের স্বাভাবিক চলাচল—সমুদ্র থেকে নদীতে আসা এবং নদী থেকে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার পথে যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে—সে বিষয়ে আমরা খুব কমই কথা বলি।

সম্মেলনের আহবায়ক এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী ফোরাম–এর সাধারণ সম্পাদক ও ধরা–এর সদস্য সঞ্জীব দ্রং। মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট –এর সমন্বয়ক এবং এশিয়ান এনার্জি নেটওয়ার্ক –এর আহবায়ক লিডি নাকপিল। মূল প্রবন্ধের ওপর প্রতিক্রিয়ায় ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী আসাদ রেহমান। সংহতি বক্তব্যে রাখেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিস দামলে এবং টারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সাইনান হটন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্মলন ও  ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল।

সম্মেলনে বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ১৪টি দেশের পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতারা অংশ গ্রহণ করেন।

আপন দেশ/এসআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়