Apan Desh | আপন দেশ

গাজায় খাদ্য সংঙ্কট, অনাহারে মৃত্যু বাড়ছেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২৩ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১০:০৯, ২৩ জুলাই ২০২৫

গাজায় খাদ্য সংঙ্কট, অনাহারে মৃত্যু বাড়ছেই

ছবি: সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজায় গণহত্যার পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে ইসরায়েল। সেখানে কোনো ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না দখলদাররা। ফলে খাদ্য সঙ্কটে অনাহারে মরছে ফিলিস্তিনিরা। গত ২৪ ঘন্টায় খাদ্যাভাবে অন্তত ৩৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের সময় উপত্যকাটিতে অপুষ্টিতে ভুগে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮০ জনই শিশু।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছেন ১০১ জন। তাদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। নিহতদের মধ্যে ১২ জন শিশু। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ মানুষ ক্ষুধায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া। এর মধ্যে ৭০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় বর্তমানে একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। খুব সীমিত পরিমাণে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে জাতিসংঘের ত্রাণ। সেখানেও চলছে লুটপাট। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিচালিত বিতর্কিত ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রগুলোতে খাবার সংগ্রহ করতে দিয়ে নির্বিচার গুলির মুখে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ৭ মে থেকে ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে হত্যা করা হয়েছে ১ হাজারের বেশি মানুষকে।

শুধু গাজার বাসিন্দারা নয়, অনাহারে ভুগছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউর কর্মী ও চিকিৎসকেরাও। সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনাহার ও অবসাদের কারণে তাঁদের অনেক কর্মী ও চিকিৎসক কাজ করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন। কর্মীদের কাছ থেকে এমন ঘটনার কয়েক ডজন বার্তা পেয়েছেন তিনি।

গাজায় বিতর্কিত ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি সংস্থা। জিএইচএফের সমালোচনা করে লাজ্জারিনি বলেন, সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রগুলো হলো মৃত্যুর ফাঁদ। ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের স্নাইপাররা নির্বিচার গুলি করেন, যেন তাঁদের হত্যা করার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে গাজায় অবস্থান করা সাংবাদিকেরাও অনাহারে মারা যেতে পারেন বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিকদের সংগঠন। এক চিঠিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ সাংবাদিকদের এভাবে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেয়া যাবে না। পরে এএফপির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে গাজায় অবস্থান করা সংস্থাটির সাংবাদিকদের বেহাল দশার কথা স্বীকার করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের এমন অসহায় অবস্থার মধ্যে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার ভোর থেকে উপত্যকাটিতে অন্তত ৫১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে ৫৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে এখনই যুদ্ধ থামানোর’ আহবান জানিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ২৮টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের মতে, গাজায় মানুষের দুর্ভোগ এক নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে। বিবৃতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের আহবান জানানো হয়েছে। তবে এ বিবৃতিকে বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েল।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়