ইরানে মার্কিন হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোতে সতর্কতা জারি

ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় উপসাগরীয় দেশগুলো উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, আলোচনা শুরু হয়েছে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রভাব নিয়ে। খবর আল-জাজিরার।

ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর বাহরাইন সরকার তাদের ৭০ শতাংশ সরকারি কর্মচারীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে নাগরিকদের উদ্দেশে জানিয়েছে, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক অবনতি ঘটেছে। ফলে আমরা নাগরিক ও বাসিন্দাদের জননিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শুধুমাত্র প্রয়োজনে প্রধান রাস্তা ব্যবহার করার আহবান জানাচ্ছি।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সিনিয়র ফেলো হাসান আল-হাসান বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে প্রকাশ্য সংঘাতের ঝুঁকি এ অঞ্চলকে একটি ধ্বংসাত্মক ও সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আল-হাসান আরও বলেন, যদিও যুদ্ধটি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি শত্রুতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সরাসরি মার্কিন সম্পৃক্ততার ফলে এটি উপসাগরীয় দেশগুলোকে—বিশেষ করে বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারকে (যেখানে বৃহৎ মার্কিন সামরিক স্থাপনা রয়েছে)  এ সংঘাতে টেনে আনার ঝুঁকি রাখে। এ সতর্কতাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এ অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপক হতে পারে।

• অভিযানের নাম ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’, বি-২ বিমান যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে, ‘কোনো প্রতিরোধ করেনি ইরান’

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন জানিয়েছেন, ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে পরিচালিত অভিযানে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি-২ বোমারু বিমান স্থানীয় সময় শুক্রবার উড্ডয়ন করে। ১৮ ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে হামলা চালায় বিশেষ এ বিমান।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কেইন। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, কেইন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একাধিক শাখা পরিকল্পিতভাবে ও সমন্বিতভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে।

ইরানে হামলা চালানোর সময় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ আসেনি বলে উল্লেখ করেন জেনারেল কেইন। তিনি বলেন, ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে ‘কোনো গুলি ছোড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।’ এ মার্কিন জেনারেল আরও বলেন বলেন, ইরানের যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়েনি, মনে হচ্ছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের শনাক্তই করতে পারেনি।

• এ মিশনের লক্ষ্য ইরানের সরকার পরিবর্তন নয়: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইরানে মার্কিন হামলার লক্ষ্য দেশটির সরকারের পরিবর্তনের লক্ষ্যে নয় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেগসেথ। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ মিশনের লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ঠেকানো।

আল–জাজিরার খবরে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইরানের বর্তমান সরকার পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত লক্ষ্য কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে হেগসেথ বলেন, এ মিশন সে জন্য ছিল না, (ইরানের) সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়।’ তিনি এ হামলাকে ‘নির্ভুল সামরিক অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, হামলার লক্ষ্য ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে আমাদের জাতীয় স্বার্থের ওপর আসা হুমকি ঠেকানো।’

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগেও রিপোর্ট করেছি—অনেক বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আসলেই হুমকি সৃষ্টি করেছিল।’ ইরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের এ কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক।

• ইরানের বুশেহর ও ইয়াজদ প্রদেশে বিস্ফোরণ

ইরানের মধ্যাঞ্চলে ইয়াজদ প্রদেশে বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বুশেহর প্রদেশেও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।

ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, ইয়াজদ প্রদেশে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির বুশেহর প্রদেশে ‘জোরালো বিস্ফোরণের’ শব্দ শোনা গেছে বলে পৃথকভাবে জানানো হয়েছে।

• ইরানে হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ চীনের, থামতে বলল ইসরায়েলকে

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে চীন। পাশাপাশি সংঘাতের সব পক্ষকে, বিশেষ করে ইসরায়েলকে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে বেইজিং।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ রোববার এক বিবৃতিতে এসব কথা জানায়। বিবৃতিতে চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াচ্ছে।

• ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’: রাশিয়া

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ রোববার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানোর এ দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত। যে যুক্তিই দেয়া হোক না কেন—আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলোর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এ হামলা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। চলমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পথে ফিরিয়ে নেয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে প্রচেষ্টা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আজ রোববার রাশিয়া যাচ্ছে। আগামীকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা রয়েছে।

• প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ জন্য রাশিয়া যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, তিনি আজ রোববার রাশিয়া যাচ্ছেন। মস্কোয় আগামীকাল সোমবার তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা’ হবে।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে আরাগচি বলেন, রাশিয়া ইরানের বন্ধু। আমরা একটা কৌশলগত অংশীদারত্ব উপভোগ করছি। সব সময় আমরা পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শ করি, সমন্বয় করি।

আরাগচি বলেন, আমি আগামীকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব। আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

রাশিয়া ও ইরান গত জানুয়ারিতে একটি ‘বিস্তৃত অংশীদারত্ব চুক্তি’ স্বাক্ষর করে, যা তাদের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মৈত্রীকে আরও মজবুত করে। তবে এ চুক্তিতে কেউ হামলার শিকার হলে পারস্পরিক সামরিক প্রতিরক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।

আপন দেশ/এমবি