
প্রতীকী ছবি
হার্ট অ্যাটাক একধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি; সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো না হলে বা হাসপাতালে ভর্তি না করালে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত থাকতে পারে। হার্ট অ্যাটাক কি? হার্টে রক্ত প্রবাহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত জমাট বেঁধে যায়, যা রক্তনালির পথ আটকে দেয়। ফলে হার্ট ঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়।
পর্যাপ্ত রক্ত না পেলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হার্ট। ফলে হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন লক্ষণ জানা এবং তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক ঘটে করোনারি হার্ট ডিজিজের কারণে। এ সময় চর্বিওয়ালা পদার্থ হার্টে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালিতে এসে জমে। চর্বির এমন জমে যাওয়াকে বলে ‘প্লাক’। এসব প্লাক ফেটে গেলে সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে একটি দলা তৈরি করে, যা রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ কারণে হার্টে রক্ত পৌঁছায় না। আর তাতেই হয় হার্ট অ্যাটাক।
হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সাধারণ বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে একটি হচ্ছে বুকের ব্যথা। এ ব্যথা অনেক সময় চাপ, টানটান ভাব বা বুক চেপে ধরার মতো অনুভূত হয়। অনেকেই বলেছেন, এ সময় তাদের মনে হয় যেন একটি হাতি তাদের বুকের ওপর বসে রয়েছে– এমন ভারি চাপ অনুভব করেন তারা।
এ ব্যথা কয়েক মিনিট ধরে থাকতে পারে বা মাঝেমধ্যে কমে গিয়ে পরে আবার শুরু হতে পারে। জানা জরুরি যে, সবার ক্ষেত্রে ব্যথা খুব বেশি হয় না। কারও কারও জন্য এটি গ্যাস্ট্রিক বা হার্টবার্নের মতোও মনে হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
আরও পড়ুন<<>>টি-ব্যাগে বিপজ্জনক বিষাক্ত ধাতু
হার্ট অ্যাটাকের কারণে শরীরের অন্য অংশেও ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা হাত, বিশেষ করে বাম হাত, গলা, চোয়াল, পিঠ বা পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় শ্বাস নিতে কষ্টও অনুভব করতে পারেন কেউ কেউ, এমনকি কিছু না করে চুপচাপ থাকেলেও। কারণ ওই সময় পুরো শরীরে অক্সিজেন পৌঁছাতে হিমশিম খায় হার্ট।
অন্যান্য সতর্কতা লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মাথা ঘোরা বা হালকা লাগা, ঠাণ্ডা ঘাম হওয়া এবং বমি বমি ভাব। কিছু মানুষ এ সময় বমিও করতে পারেন। অনেকে এসব লক্ষণকে গ্যাস্ট্রিক বা অন্য সাধারণ কোনো সমস্যা ভেবে ভুল করেন। ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায়, যা বিপদ বাড়াতে পারে।
নারী ও বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন লক্ষণ কখনো কখনো ভিন্ন হতে পারে। যেমন প্রচলিত বুক ব্যথা নয়। এ সময় নারীদের অসুস্থ লাগতে, ক্লান্তি অনুভব করতে বা চোয়াল ও পিঠে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্করা শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা বা বিভ্রান্তিও অনুভব করতে পারেন। এসব লক্ষণ সহজে চোখে পড়ে না। তবে এসব লক্ষণকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।
কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন এমন মনে হলে তৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবায় ফোন করতে হবে। এ সময় অপেক্ষা করা উচিত নয়। যত দ্রুত রোগী চিকিৎসা পাবেন তাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে।
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্যের সময় চেষ্টা করুন তাকে শান্ত করে বসিয়ে রাখার। কিছু ক্ষেত্রে জরুরি কর্মীরা অ্যাসপিরিন খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। তবে কেবল যদি চিকিৎসক বলেন এবং সে ব্যক্তির অ্যাসপিরিনে এলার্জি না থাকে তবেই সেবন করা উচিত, অন্যথায় নয়।
হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। ভালো খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান থেকে দূরে থাকা এবং চাপ কমানোর চেষ্টা করা উচিৎ। নিয়ম করে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করানোও জরুরি, যাতে দেহের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ঠিকঠাক থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন লক্ষণ চিনতে পারা খুব জরুরি। কারণ তা জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বুকের ব্যথা প্রধান লক্ষণ। তবে নারীদের ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াই হার্ট ও জীবন রক্ষার সেরা ভালো উপায়।
আপন দেশ/জেডআই