Apan Desh | আপন দেশ

টি-ব্যাগে বিপজ্জনক বিষাক্ত ধাতু

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টি-ব্যাগে বিপজ্জনক বিষাক্ত ধাতু

ফাইল ছবি

বাজার থেকে সংগৃহীত একাধিক জনপ্রিয় টি-ব্যাগে সিসা, পারদ, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)’ পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।

সম্প্রতি রাজধানীর লালমাটিয়ায় এসডোর কার্যালয়ে ‘ব্রিউইং টক্সিনস : এক্সপোজিং দ্য হেভি মেটাল হ্যাজার্ড ইন টি-ব্যাগস অ্যান্ড ড্রাইড লুজ টি’ শীর্ষক গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। এতে স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত ১২টি টি-ব্যাগ এবং একটি খোলা চা-পাতার নমুনা ল্যাবরেটরিতে বিশ্লেষণ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, অধিকাংশ টি-ব্যাগেই নিরাপদ মাত্রার তুলনায় বহু গুণ বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে।

বিশেষ করে টি-ব্যাগের উপাদানে সর্বোচ্চ মাত্রায় যে ধাতুগুলো শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ক্রোমিয়ামের মাত্রা পাওয়া গেছে ১,৬৯০ পিপিএম, যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫ পিপিএম। একইভাবে, সিসা পাওয়া গেছে ৫১ পিপিএম মাত্রায়, যা নির্ধারিত সীমা পাঁচ পিপিএম-এর তুলনায় অনেক বেশি। 

পারদের পরিমাণ ছিল ১০৮ পিপিএম, যেখানে নিরাপদ সীমা মাত্র ০.৩ পিপিএম। আর্সেনিক পাওয়া গেছে ১৪ পিপিএম, যা স্বীকৃত সীমা দুই পিপিএম-এর চেয়ে বহুগুণ বেশি। এছাড়া, চা-ব্যাগ থেকে আলাদা করা চা-পাতায় অ্যান্টিমনি পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ১৫৪ পিপিএম মাত্রায়।

গবেষকরা বলেন, এসব ভারী ধাতু অজৈব ও রসায়নগতভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘদিন ধরে শরীরে জমা হয়। এর প্রভাবে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালির ক্ষতি, হৃদরোগ, স্নায়ুবিক জটিলতা, লিভার ও কিডনি রোগ, ত্বকের সমস্যা, বন্ধ্যত্ব এবং শিশুদের বিকাশে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

এসডোর গবেষণায় আরও জানা গেছে, দেশের ৯৬ শতাংশের বেশি মানুষ নিয়মিত চা পান করেন, কিন্তু ৯৯ শতাংশ মানুষই জানেন না যে টি-ব্যাগে ক্ষতিকর ভারী ধাতু থাকতে পারে। জরিপে অংশগ্রহণকারী তিন হাজার ৫৭১ জনের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ মানুষ চা-পাতা বা টি-ব্যাগ কেনার সময় লেবেল বা সার্টিফিকেশন দেখে থাকেন। এতে চা-ভিত্তিক পণ্যে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বিপজ্জনক পর্যায়ের অজ্ঞতা রয়েছে, তা উঠে আসে।

গবেষণাটির উপস্থাপনায় বক্তারা বলেন, টি-ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও প্লাস্টিকজাত উপাদান থেকেও এসব ভারী ধাতু আসতে পারে। বক্তারা এটিকে ভোক্তা অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ বলেন, এই গবেষণা ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভোক্তাদের সুরক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সতর্কবার্তা। ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে।

আরও পড়ুন<<>>৩ মিনিটে জোড়া লাগবে ভাঙা হাড়, দাবি চীনা চিকিৎসকদের

বিএসটিআই-এর সহকারী পরিচালক ইসমাত জাহান বলেন, গবেষণাটি যুগান্তকারী। দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে, তবে দেশের চা শিল্পের সুরক্ষাও বিবেচনায় নিতে হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের গবেষণা কর্মকর্তা নাজমুল আলম মন্তব্য করেন, গবেষণায় প্যাকেজিং উপকরণ সম্পর্কিত যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা পূর্বে আমাদের জানা ছিল না। ভবিষ্যতে যৌথভাবে গবেষণা করা হলে আরো কার্যকর ফলাফল আসবে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যদিও কিছু নমুনা চা-পাতায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক ও কোবাল্ট পাওয়া গেছে, তবে ভারী ধাতুর উপস্থিতির ঝুঁকি এ ইতিবাচক দিকগুলোকে চাপা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য কিছু সুপারিশও দেয়া হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে—চা-পাতা চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন পর্যায়ে নিয়মিত পরীক্ষা চালানো এবং এর ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করতে। ভারী ধাতু প্রবেশের ঝুঁকি থাকে এমন ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি, নিরাপদ প্যাকেজিং নিশ্চিত করতে লেবেল ও সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, পিইটি ও প্লাস্টিকজাত টি-ব্যাগ নিষিদ্ধ করে পরিবেশবান্ধব বিকল্প চালু করার কথাও বলা হয়েছে।

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, চা আমাদের জীবনের অংশ হলেও, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তা দেহের পাশাপাশি মানসিক চাপও সৃষ্টি করতে পারে।

ড. শাহরিয়ার হোসেন, গবেষণাটির প্রধান কারিগরি পরামর্শক হিসেবে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে দোষারোপ করা নয়, বরং সকলে মিলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়া।

গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একমত যে, এ গবেষণা টি-ব্যাগ ও চা-ভিত্তিক খাদ্যপণ্যে দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ঝুঁকির উপর আলো ফেলেছে। এখন প্রয়োজন সরকার, শিল্প ও ভোক্তাদের সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ সংকট মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি ও ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ানো এখন জরুরি।

আপন দেশ/জেডআই

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ:

শিল্পকলার মহাপরিচালক হলেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন চলতি বছরে ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামছে বুধবার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানকে বদলি চুরি হওয়া বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ফিলিপাইনে বাজেয়াপ্ত ৪ রাজনীতিবিদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন আজ সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ-অর্থপাচারের ২৩ বস্তা আলামত উদ্ধার আর্থিক খাতে স্বচ্ছতায় বাংলাদেশকে আট পরামর্শ যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের গাজা দখলের যুদ্ধে আরও ৯১ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি রোমাঞ্চকর জয়ে সুপার ফোর শুরু বাংলাদেশের