
ছবি: আপন দেশ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা হিসেবে অভিহিত করে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকে উত্তাল ছিলো ইবি ক্যাম্পাস। পরবর্তীতে প্রশাসনের লিখিত আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রায় ৫ ঘন্টা পরে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বেলা ১১টা থেকেই প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘কাজ না করে বেতন নে, বেতন কি তোর হালাল রে’, ‘ইবির পুকুরে ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে ২ মাস’, ‘কার দায় কে নেবে, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘বেশি আবেগি হইও না তোমরা’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘টাকা লাগলে টাকা নে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দে’, 'শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’সহ বিভিন্ন স্লোগানের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। সে খুব ভালো সাঁতার জানতো, তাই পানিতে ডুবে সে মারা যাবে, এমনটা হতে পারে না। মরদেহ পাওয়ার ৪০ মিনিট পর আসে অ্যাম্বুলেন্স, আর সাড়ে তিনঘন্টা পর আসে হল প্রশাসন। মানে তাদের কাছে এ ঘটনা সাধারণই মনে হচ্ছে। মরদেহ পাওয়ার একঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ তারা নেয়নি। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাদা কাগজে সাধারণ বিবৃতি দেয় তারা। শিক্ষার্থীরা এ মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাইতে গেলে বলেন, তোমরা অতি আবেগি হইয়ো না। এমন মাজাভাঙ্গা প্রশাসনের ওই চেয়ারে বসার কোনো অধিকারই নাই।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের সামনে কথা বলতে গেলে তুমুল সমালোচনা ও তোপের মুখে পতিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেয়।
আরওপড়ুন‘<<>>‘শিক্ষাব্যাবস্থা সংস্কার না হলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়’
এরপরে প্রশাসনের প্রতি সাজিদের সহপাঠীদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার ভেতর প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজিদের পরিবারকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, সমগ্র ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ সহ ১৫ দফা দাবি পেশ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি গুলো মেনে নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের কার্যালয়ের প্যাডে স্বাক্ষর করেন রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, আল কুরআন বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষক অধ্যাপক ড. শেখ জাকির হোসেন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাজিদের বন্ধু আজহারুল ইসলাম।
এদিকে, শনিবার সকালে সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা প্রশাসনের দায়িত্ব নেয়ার পরে থেকে বারবার নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানালেও প্রশাসন কর্ণপাত করছে না বলে অভিযোগ করেন। কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শরীক হন তারা। এছাড়া এদিন কর্মসূচিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, সাজিদ আমার বিভাগের ছেলে। ওর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কার্যক্রম কীভাবে দ্রুত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের দাবি গুলোও মেনে নেয়া হয়েছে। আজকে থেকেই সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। আমরা এখন যত পদক্ষেপ নেই না কেন সাজিদকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর পার থেকে ভাসমান অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার প্রায় ১০-১৫ মিনিট আগেও তার ফোন রিসিভ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে তার মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলে এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।