চালক আবদুল আউয়াল।
সরকারের এক যুগ্ম সচিবকে গাড়ির মধ্যে জিম্মি করে ছয় লাখ টাকা দাবি করেছিলেন তারই গাড়িচালক। একপর্যায়ে ওই যুগ্ম সচিবের কর্মস্থল পরিকল্পনা কমিশনে আসেন। তখন তাকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা ওই কর্মকর্তাকে সরকারি গাড়িতে আটকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘোরান তিনি।
জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া মাকসুদা হোসেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে কর্মরত। তার গাড়িচালকের নাম আবদুল আউয়াল (৪০)। তিনি দুই মাস ধরে ওই কর্মকর্তার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার বাড়ি বগুড়া জেলায়। এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের আরেক যুগ্ম সচিবের গাড়ি চালাতেন তিনি। বিকেলে তাকে শেরেবাংলা নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এ তথ্য জানিয়েছেন শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন>>>তারেক রহমানের ফ্লাইটে দেশে ফেরার হিড়িক নেতাকর্মীদের
টাকা নেয়ার জন্য চালক তাকে জিম্মি করেছিলেন বলে জানান মাকসুদা হোসেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, সকাল সোয়া আটটায় ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়িতে করে তিনি শেরেবাংলা নগর এলাকায় পরিকল্পনা কমিশনে নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। চালক আবদুল আউয়াল চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে এসে গাড়ি কমিশনে না নিয়ে বিজয় সরণির দিকে যেতে থাকেন। গাড়ি কেন অন্যদিকে নিচ্ছেন, জানতে চাইলে জবাব দেন না চালক। মহাখালী, বনানী হয়ে বিমানবন্দর সড়কের দিকে গাড়ি চালতে থাকেন তিনি। চালক যে তাঁকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটি নিজের এক সহকর্মীকে জানান মাকসুদা হোসেন।
একপর্যায়ে মাকসুদা হোসেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিতে গেলে চালক জোর করে তার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন বলে জানান যুগ্ম সচিব। তিনি বলেন, মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চালক গাড়ির দরজা লক করে দেন। এরপর গাড়ি উত্তরার দিয়াবাড়ি ঘুরে বেড়িবাঁধ হয়ে সাভারের হেমায়েতপুরের দিকে চালাতে থাকেন। পরে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার দারুস সালাম হয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দুপুর ১২টার দিকে পরিকল্পনা কমিশনের সামনে আসেন।
মাকসুদা হোসেন বলেন, কী কারণে এলোমেলো গাড়ি চালাচ্ছেন, কেন তাকে জিম্মি করা হয়েছে, জানতে চাইলেও কোনো কথা বলেননি চালক।
চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের মাঠে (সাবেক বাণিজ্য মেলা) গাড়ি থামিয়ে এবার যুগ্ম সচিবের কাছে নিজের মায়ের চিকিৎসার জন্য ছয় লাখ টাকা দাবি করেন চালক। তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা চান তিনি। তখন যুগ্ম সচিব বলেন, এ মুহূর্তে তার কাছে টাকা নেই। অফিসে গেলে টাকা দেয়া হবে। এ কথা বলার পর তাকে কমিশনের ভেতরে নিয়ে আসেন চালক আবদুল আউয়াল। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করেন। বিকেল পর্যন্ত চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
একজন যুগ্ম সচিবকে জিম্মি করা হয়েছে, এ খবরে সকাল থেকে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা ওই গাড়ি ট্র্যাক করতে থাকে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আখতার বলেন, চালক একজন মাদকাসক্ত বলে তারা জানতে পেরেছেন। ওই কর্মকর্তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন চালক। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।
মাকসুদা হোসেন তার দফতরে বলেন, চালকের টাকা প্রয়োজন হলে চাইতে পারতেন। তাকে জিম্মি করে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চার ঘণ্টা ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরানোর প্রয়োজন ছিল না। এ ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।


































