Apan Desh | আপন দেশ

রাবি প্রশাসনে এখনও বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ২০ মে ২০২৫

রাবি প্রশাসনে এখনও বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা

ফাইল ছবি

গত বছরের ৫ আগস্ট অঢেল রক্ত ও অসংখ্য জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে৷ তবে পতনের ১০ মাস পেরোলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের সিন্ডিকেট ও ডীন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরা। 

অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও তীব্র অসন্তোষ ও প্রশাসনের সক্ষমতার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে প্রশাসনের দাবি এ বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ৩১ জুলাই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‌‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ (হলুদ প্যানেল) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাদেরকে। তবে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। 

অন্যদিকে ডীন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছে আওয়ামীপন্থী হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আইন অনুষদে আইন বিভাগের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদে গণিত বিভাগের ড. নাসিমা আখতার, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস. এম. আকরাম উল্ল্যাহ, প্রকৌশল অনুষদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক, ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ. এইচ. এম. সেলিম রেজা। 

আরও পড়ুন>>>>রাবি মেডিকেল সেন্টারে চেয়ার দিল ইবনে সিনা ট্রাস্ট

এছাড়াও সিন্ডিকেট সদস্য হিসাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রসায়ন বিভাগের হাসান মাহমুদ, সহযোগী অধ্যাপক পদে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের খন্দকার খালিদ বিন ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক পদে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের রাকিবুল ইসলাম, প্রভাষক পদে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মো. রিজু খন্দকার বিনা।

এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল বাবু বলেন, বিগত ফ্যাসিস্টের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা হয়ে উঠেছিল লেজুড়বৃত্তিক দানবীয় ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নই ছিল তাদের প্রধান কাজ। বিরোধী দল-মত দমনে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উসকানি কেঁড়ে নিয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে, আন্দোলনকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে সরকারকে উস্কানি দিয়েছে। কিন্তু আফসোসজনক বিষয় বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা তাদেরকে দুধকলা দিয়ে পুষতে দেখছি। ডীন, সিন্ডিকেটসহ সবজায়গায় এখনো ছড়ি ঘুরাচ্ছে তারা। এটা আমাদের বিপ্লবের সাথে প্রতারণা, শহীদদের সঙ্গে প্রহসন। 

আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, অতিদ্রুত এসব ডীন, সিন্ডিকেট মেম্বারদের অপসারণ করতে হবে। ৩১ জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উস্কানি-দাতাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হব।

এ বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, জুলাই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন আমরা কোথায় দেখতে পাচ্ছি না। সবজায়গায় স্বৈরাচার ও তার দোসরদের আগলে রাখতে দেখছি। বিপ্লবের ১০ মাস পার হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, ডীন পদ থেকে আওয়ামী দোসরদের সরানো হয়নি, তাদের শাস্তি হয়নি। 

প্রশাসনকে আবার স্পষ্ট ভাবে বলে দিতে চাই অতিদ্রুত তাদেরকে অপসারণ করুন, ৩১ জুলাই যারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেছিল, আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করতে উসকানি দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন৷নতুবা তাদের নামে আমি বাদী হয়ে মামলা করব আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্রতি আপনাদের এ দরদের কারণ কি তা রাজপথে এসে জবাব নেব।

প্রশাসন ব্যর্থ দাবি করে রাবি ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, বর্তমান রাবি প্রশাসনের শীর্ষ চেয়ারগুলোতে যাদের বসানো হয়েছে তারা চেয়ারে বসেই ভুলে গেছেন সে চেয়ারগুলো আমাদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত। চব্বিশের জুলাই-আগষ্ট চেতনাকে তারা সত্যিকার অর্থে লালন করেন কিনা সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। যদি তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করত তবে অবশ্যই জুলাই আন্দোলন চলাকালীন হলুদ প্যানেলের যে সকল শিক্ষক সরাসরি আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম পদক্ষেপ নিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা অবগত, সে সকল আওয়ামী সমর্থক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম পদক্ষেপ তো দূরে থাক তাদের সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের আঁতাত চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা স্পষ্টত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে গাদ্দারি করে চলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে উঠা নেতৃত্বের একটা অংশ বিভিন্ন অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। রাবি ছাত্রদল বেশ কয়েকবার সমাবেশের মধ্য থেকে স্মারকলিপি প্রদানের মধ্য দিয়ে এদের বিচার চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বধ্যপরিকর। ইতোমধ্যে সত্যানুসন্ধ্যানী কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে বিগত প্রশাসনের আমলের অপরাধ-দুর্নীতিসহ সকল অপকর্মের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। ২৯ মে পর্যন্ত তথ্য নেয়া হবে। এরপর আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়