
ছবি: আপন দেশ
বন্যা ও বৃষ্টির অজুহাতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচাবাজার। প্রায় সব ধরণের সবজির দাম চড়া। কাঁচা মরিচের কেজি এখনও ২০০ ঘরে। এবার তার সঙ্গে যোগ হলো চাল, ডাল, তেল ও দেশি পেঁয়াজের দামও। পাশাপাশি বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। তবে ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। এ সপ্তাহের মাছের বাজারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০১ আগস্ট) বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সবজির দাম বাড়তি। তাছাড়া গাড়ি ভাড়া, নিজের খরচ, দোকান খরচসহ দৈনন্দিন নানা রকম চাঁদা যুক্ত হওয়ায় এ দাম আরও বেড়ে যায়। দেখা যায় গ্রাম পর্যায়ে যে সবজির দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, তা ঢাকায় ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
তারা আরও জানান, বর্ষা শেষ হচ্ছে। এখন অনেক সবজির মৌসুমই শেষের দিকে। নতুন সবজি না ওঠা পর্যন্ত দাম বাড়তির দিকে থাকবে। দুই সপ্তাহের মাথায় নতুন সবজি উঠলে ধীরে ধীরে দাম আরো কমবে।
এদিন সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি পটোল ৫০ টাকা, করল্লা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, আর গোল বেগুন ১০০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গাজর ১২০, ধনিয়া পাতা ৮০, বড় মিষ্টিকুমড়া প্রতি পিস ৫০ ও কাঁচকলা ২০ টাকা হালি দরে বিক্রি হয়। শসার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—হাইব্রিড শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং দেশি শসা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেশি। কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যদিও এর দাম কিছুটা কমেছে।
সবজির পাশাপাশি শাকের দামও বাড়তি। এক আঁটি লালশাক কিনতে কমপক্ষে ২০ টাকা লাগছে। বাজারে লাউশাক, কলমিশাক, কচুশাক এবং পুঁইশাক পাওয়া যাচ্ছে বেশি। এর মধ্যে কলমি ও লালশাকের দামই সবচেয়ে কম। লাউশাক কিনতে খরচ হচ্ছে বাজাভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কলমিশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত প্রতিআঁটি বিক্রি হচ্ছে।
তবে আলুর দাম বাড়েনি, ২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা এক দিন আগেও ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরের আগে বড় কোনো সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। সাময়িকভাবে বৃষ্টির কারণে বাজারে সরবরাহ কম থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এদিকে চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বোরো মৌসুমের শুরুতেই অসাধু মজুতদার ও করপোরেট চাল ব্যবসায়ীরা সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ধান কিনে গুদামজাত করেছেন। এতে সাধারণ মিলারদের হাতে ধান পৌঁছায়নি, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। উপরন্তু সাম্প্রতিক বৈরী আবহাওয়ায় চাতালে পর্যাপ্ত ধান শুকানো যাচ্ছে না, ফলে সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে রাজধানীতে প্রতি কেজি পাইজাম বা লতা চাল ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই দিন আগেও সর্বোচ্চ ৭০ টাকা ছিল। নাজিরশাইল বা মিনিকেট ও ইরি বা স্বর্ণা চালের দাম আপাতত স্থিতিশীল থাকলেও গত এক মাসে সেগুলোর দামও বেড়েছে। এখন বাজারে নাজিরশাইল বা মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮৭ টাকা এবং ইরি বা স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে এ দাম ছিল যথাক্রমে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ৫২ থেকে ৬০ টাকা।
চালের পাশাপাশি ভোজ্যতেলের দামও চড়েছে। বোতলজাত দুই লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে ৩৭৫ থেকে ৩৭৮ টাকায় পৌঁছেছে। প্রতি লিটার খোলা পামঅয়েল এখন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, আর সুপার পামঅয়েল ১৫২ থেকে ১৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডালের বাজারও অস্থির। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজি ১০৫ থেকে ১২৫ টাকা এবং ছোট দানার ডাল ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় পাঁচ টাকা বেশি। মুগ ডালের দাম এক দিনে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মানভেদে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে। অ্যাংকর ডালও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামে খানিকটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেলেও বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। তবে প্রতিকেজি সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। তবে মহল্লার মুদি দোকানে এক হালি ডিম কিনতে খরচ করতে হয় ৪৫ টাকা।
মাংসের বাজারে দাম স্থির রয়েছে। মায়ের দোয়া গোস্ত বিতানের মোহাম্মদ জামান জানান, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, মাথার মাংস ৩৫০, কলিজা ৭৫০ এবং মগজ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১০৫০ টাকা, খাসির মাথা ২৫০ ও কলিজা ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বর্তমানে তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া পাঙ্গাস ২৬০ টাকা, ছোট পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, লইট্টা মাছ ২২০ টাকা, ট্যাড়া ৫০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০-৫৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০-৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ টাকা এবং বড় সাইজের চিংড়ি ১০০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৬০ টাকা কেজিতে।
তবে ইলিশের বাজার এখনো নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। এক কেজি ওজনের ইলিশ গতকাল ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, চাঁদপুর, বরিশালসহ বড় মোকামগুলোতে প্রচুর ইলিশ আসছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমবে বলেও তারা আশা করছেন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।