Apan Desh | আপন দেশ

চালে স্বস্তি, সবজি-মাছ-মুরগির বাজার ঊর্ধ্বমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২ মে ২০২৫

আপডেট: ১৬:৪০, ২ মে ২০২৫

চালে স্বস্তি, সবজি-মাছ-মুরগির বাজার ঊর্ধ্বমুখী

ছবি : আপন দেশ

গত কয়েক মাস ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছিল চালের বাজারে। আমদানি বৃদ্ধি, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজে আসছিলনা। অবশেষে দীর্ঘ সময় চালের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন মৌসুমে চাল আসতে শুরু করায় দাম কমতে শুরু করেছে। তবে আগের সপ্তাহের মতই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি, পেঁয়াজ, মাছ ও মুরগি।
    
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২ মে) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

চালের আরতে গিয়ে দেখা গেছে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে পাইকারিতে সবচেয়ে সস্তা চাল মিলছে ৪৮ টাকা কেজিতে। তবে এ দাম কমার প্রভাব এখনো খুচরা বাজারে সেভাবে পড়েনি। মোটা ও সরু নাজিরশাইল চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।

মুগদা, খিলগাঁও ও কমলাপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, মাঝারি চালের দাম ৬৪ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সরু নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন বোরো ধানের মৌসুম চলছে। বোরো ধান থেকে যে চাল হয়, সেটি বাজারে এসেছে। সাধারণত মিনিকেট হিসেবে পরিচিত ছাঁটাই করা চালগুলো এ ধান থেকেই আসে। ফলে বাজারে নতুন মিনিকেট চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে।

এদিকে ঈদের পর থেকেই বাজারে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। চলতি সপ্তাহে সেটি আরও বেড়েছে। ঈদের পর থেকে ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়া মুরগির বাজারও এ সপ্তাহে ঊর্ধ্বমুখী। বেড়েছে মাছের দামও। পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েই চলেছে। 

সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গ্রীষ্মের মৌসুম পড়ছে। যে কারণে এ মাঝামাঝি সময়ে সবজির সরবরাহ কম। এতে প্রায় প্রতিটি সবজি ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে গত তিন-চার মাস সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে যে স্বস্তি ছিল, তা আর নেই। বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। কোনো কোনো সবজির দাম একশ পার হয়ে গেছে। এমনকি সবসময় কম দাম থাকা পেঁপেরও কেজি উঠেছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলা, বেগুন, বরবটি, চিচিঙার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দর দেখা গেছে কাঁকরোলের। গ্রীষ্মকালীন এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৪০ টাকায়। সজনে ডাটার দর সবসময় কিছুটা বেশি থাকে। এর কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

নতুন করে না বাড়লেও আগে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে যা কেনাবেচা হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর কেজিতে ৫০ টাকার বেশি বেড়ে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। 
 
বিক্রেতাদের দাবি, এবার মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত কম হলেও গত মাসের শেষদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। এতে মরিচ ও ধনেপাতা পচে যাচ্ছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।

এদিকে, মাছের বাজারেও বেশ চড়াভাব দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চাষের মাছের সরবরাহ কিছুটা কম। এতে নদীর কিছু মাছের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি জাটকা ধরা বন্ধ থাকায় অনেক নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ আছে। যে কারণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশসহ চিংড়ি মাছের দাম। প্রতি ৭০০ গ্রামের একহালি ইলিশ ৫ হাজার টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিপিস দুই থেকে তিন হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ৪০০-৫০০ গ্রামের মাছ ১২০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, দাম বেড়ে প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এর দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দাম বাড়তি। চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশও আগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি চাষের রুই, কাতলা ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৪০ টাকা ও পাঙাশ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি ঈদের পর থেকে চড়া পেঁয়াজের বাজার। ওই সময় কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে দাম। এখন বাড়তি দামে আটকে আছে। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরও ৫ টাকা বেশি।

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। আজ বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা ও সোনালির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দামও আগের মতোই বেশি রয়েছে। আজ এ মানের এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।

মাংসের দাম অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ ও খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়