
ছবি : আপন দেশ
‘জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিচে ঈশ্বর’ এ অমর বাণী প্রতিফলিত হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী পূর্ব মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেনের কাজে। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে ভালোবেসে অকৃপণভাবে মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সোনার মানুষ গড়েন তারা।
তার পাশাপাশি শিক্ষক আখতার হোসেনের আরেকটি কাজ সবার নজর কেড়েছে। আর ত হলো পাখির প্রতি তার ভালবাসা। তার বাড়িতে হাজারো পাখ-পাখালি বসবাস করে। যেখানে দিনভর পাখিদের কলকাকলি আর মিষ্টি ডাকুনিতে মুখরিত হয় চারপাশ। আর প্রভৃতি পাখির আবাসস্থল গড়ে ওঠায় স্থানীয়দের কাছেও এখন বাড়িটি পরিচিতি লাভ করেছে ‘পাখিবাড়ি’ নামে।
শিক্ষক আখতার হোসেনের বাড়ির গোটা আঙিনাসহ চারিধারে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা। আর গ্রামীণ এ পরিবেশে কোনো হুমকি না থাকায় গড়ে উঠেছে বন্যপাখির অভয়াশ্রম।
ফলে এ বাড়িতেই বিভিন্ন প্রজাতির সাদা বকসহ পানকৌড়ি আর বাদুড় বসবাস করছে নির্ভয়ে। বাসা নির্মাণের পর তাদের প্রজন্মও বেড়ে উঠছে প্রকৃতির গতিতে। তবে ওপর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন পাখির এক মিলন মেলা। এখানে প্রবেশ করলেই পাখিদের খুনশুটি আর কলতানে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে যে কারও।
তবে এখানে অসংখ্য পাখির মলত্যাগের ফলে শিক্ষক পরিবারের সব সদস্যরা কিছুটা বিরক্ত হলেও পাখিদের সঙ্গে তাদের রয়েছে এক নীরব সখ্য। অধিকাংশ সময় ডাক দিলেই পাখিরা গাছ থেকে চলে আসে তাদের হাতের নাগালে। পাখিদের বিরক্ত করা তো দূরের কথা পাখির নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সব সদস্যই রাখেন আলাদা নজর। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নন, পাখিদের নিরাপদ বিচরণের জন্য এলাকাবাসী রয়েছে যথেষ্ট সচেতন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পাখিদের বাসস্থল এ বাড়িটি এখন স্থানীয়দের কাছেও অনেক গর্বের।
আরও পড়ুন<<>>সমুদ্রে গোসল করা নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণ, অত:পর...
এ গ্রামের বাসিন্দা মিরাজ জানান, ছোট থেকেই দেখে এসেছি আক্তার স্যারের বাড়িতে প্রচুর পাখির আনাগোনা। তার বাড়িতে ঢুকলেই পাখির ডাকে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমরা সব সময় নজরদারি রাখি, যাতে পাখিদের কেউ সমস্যা করতে না পারে।
স্থানীয় ওপর এক বাসিন্দা মকবুল খান বলেন, পাখিরা আসলে সব বাড়িতে থাকা পছন্দ করে না। শিক্ষক আকতার হোসেনের বাড়িতে প্রায় ৪০ বছর ধরে এসব পাখি আমরা দেখছি। তিনিসহ পরিবারের সবাই পাখিগুলোকে যত্নে দেখভাল করে।
শিক্ষক আকতার হোসেন জানান, কিছু কিছু মুহূর্তে অনেক আহত পাখি আমাদের বাড়িতে আশ্রয়ে আসে। তাদের চিকিৎসা দিতে হয়। আবার অনেক ছোট পাখির বাচ্চা খাবার খেতে পারে না। গাছ থেকে নামিয়ে তাদের নিয়মিত খাবার খাইয়ে দিই। এ ছাড়া আমার পরিবারের সবাই পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সব সময় আলাদা নজর রাখে।
তিনি আরও বলেন, এ কারণে শুধু আমি নয়, আমার পরিবারের সবার সঙ্গেই পাখিদের একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। তবে অসংখ্য পাখির মলত্যাগের কারণে বাড়িতে কিছুটা দুর্গন্ধ এলেও আমরা সবসময় দুর্গন্ধনাশক ছিটিয়ে বাড়িতে বসবাস করি। আশা করছি, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখি সুরক্ষায় সমাজের সবাই এগিয়ে আসবে।
মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কেএম মনিরুজ্জামান জানান, পাখি বাড়ি নামে পরিচিতি পাওয়া শিক্ষক আক্তারদের বাড়ি পরিদর্শন করে বেশ ভালো লেগেছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের জন্য তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আর আমরা সবসময় খোঁজখবর রাখব।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।