
ডা. জাহেদ উর রহমান
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা গণহত্যা চালিয়ে চোরের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর অন্তবর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। প্রায় ১০ মাস ক্ষমতায় থাকার পর বিভিন্ন কারণে পদত্যাগের গুঞ্জন উঠেছে তার। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ইস্যুটি বর্তমানের ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান। তার মতে, ড. ইউনূসের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়তো অতিচালাকি, না হলে শিশুতোষ।
এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তার আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান রেখে ক্ষমা চেয়েই বলেন, এ সরকার যে পথে হাঁটছে এবং তার নেতৃত্বে থাকা ড. ইউনুস এটা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে ফেলবে। সো আমাদেরকে কথা বলতে হবে। এরপর তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষাৎ নিয়ে বিবিসি বাংলার একটি রিপোর্টের বরাতে তার কথাগুলো তুলে ধরে মন্তব্য করেন, নাহিদের সঙ্গে ড. ইউনূস পদত্যাগের কথাটি বলার কারণ হলো- তিনি নিজেও চেয়েছেন কথাগুলো মাঠে যাক। তার মতে,নাহিদ ইসলাম একান্তে যে বৈঠক হবে, সে বৈঠকের খবর জানানোর কোনো কারণ ছিল না। উনি জানিয়েছেন মানে, ডক্টর ইউনুস তাকে ডেকে খবরটা মাঠে দিয়েছেন।
বিবিসি বাংলায় দেয়া সে সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনূস পতদ্যাগের বিষয়টি নিয়ে ভাবেছেন। ডা. জাহেদের মতে, প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে না ডেকে সব রাজনৈতিক দলকেই ডাকতে পারতেন। তার মতে, এ মুহূর্তে সব দলকে ডাকলে সবচেয়ে ভালো হতো। এ মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ মানে দেশের জন্য ভালো কিছু হবে না। তিনি মনে করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি এখন পদত্যাগ করেন, তাহলে দেশের জন্য খুবই খারাপ হবে। নাহিদ ইসলামের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি সবাইকে জানানোর অর্থ হলো- ড. ইউনূস যা যা চান চোখ বন্ধ করে সবাই সবকিছু মেনে নেয়। সরি ডক্টর ইউনুস ডিজাস্টারস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটার পর একটা।
ডা. জাহেদ বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) যা যা করছেন ওনার সব ভুলসহ উনি এটলিস্ট যে টাইম ফ্রেমের কথা বলছে সে পর্যন্ত রাখতে হবে। এভাবে হতে পারে না। কারণ প্রধান উপদেষ্টার ভুল আমাদের চরম সংকট তৈরি করছে। আমাদের জীবনে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন। এর আগে আমাদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ঝুঁকি আছে সংকট আছে প্রশ্ন আছে সুতরাং উনাকে ব্ল্যাংক চেক দেয়া যাবে না। কিন্তু এ পদত্যাগের ব্যাপারটা বলে উনি এ ব্ল্যাংক চেকটা চাইছেন। সম্ভবত এটা অতিচালাকি, যদি এটা সত্য হয়ে থাকে।
এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে আরেকটি অপশনের কথা তুলে ধরেন এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তার মতে, আরেকটা অপশন হচ্ছে- তিনি সত্যিই বিরক্ত এবং তিনি সত্যিই চলে যেতে চান। বিষয়টিকে ছেলে খেলা আখ্যা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে ড. ইউনূসের একটি ইন্টারভিউ এর বিষয় তুলে ধরেন ডা. জাহেদ। তিনি বলেন, নুরুল কবিরের সঙ্গে একটা ইন্টারভিউতে ড. ইউনূসকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনাদের অনেকের বিরুদ্ধে সমালোচনা আছে, তাদের ব্যাপারে পরিবর্তন বা অন্য কোনো পদক্ষেপ কি নিবেন? তখন প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, ওদের কি সমালোচনা করব। আমি নিজেই তো শিখছি, আমি নিজেই তো অনেক কিছু পারি না। একটা পর্যায়ে তিনি বলছেন, আমরা করছি যেটা লেগে যায় লাগবে না যদি লাগে আমাদের কপাল খারাপ।
ডা. জাহেদের মতে, উনি আমাদের কপাল খারাপ ব্যাপার শব্দটা ব্যবহার করেছেন। একটা দেশকে নিয়ে একটা মানুষের কত ছেলে খেলার টেন্ডেন্সি এ ভাষ্যগুলো থেকে বোঝা যায়। আমরা তার সরলভাবে এ কথাগুলো বলাকে প্রশংসা করি। কিন্তু তার ভেতরে তো এ জিনিসটা আছে। হঠাৎ করে উনার ইচ্ছা হলো- আমরা ছোটবেলায় বলতাম না খেলমু না। উনি এখন রিজাইন করে চলে যাবেন। যেহেতু উনি যেটা যেটা করতে চেয়েছিলেন পারেননি।
এ রাজনৈতি বিশ্লেষক আরও বলেন, আমি কাগজে কলমে ধরে নেই যে নূনতম সংস্কারও যদি না হয়, দেশের এ টারময়েলের টাইমে তার কি এখন চলে যাওয়া কোনোভাবে উচিত?’ এরপর তিনি একটি জাহাজের উদাহরণ টেনে বলেন, একজন ক্যাপ্টেন কি তার জাহাজ ফেলে চলে যেতে পারেন? আমরা টাইটানিক সিনেমাটা যখন প্রথম দেখি, তখন ওই সিনেমার সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। সেটা হলো- জাহাজে ক্যাপ্টেন ইজ দা লাস্ট পারসন। জাহাজ যখন ডুবতে থাকে সবাই চলে যাওয়া সম্ভব হলে তিনি যাবেন। আর আমাদের এমন একজন ক্যাপ্টেন আছেন, উনি জাহাজকে ঝড়ের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে যেতে চান। উনার তো পৃথিবী আছে। সারা পৃথিবী বসে আছে উনাকে রেসপেক্ট করার জন্য। উনি আমাদেরকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন। এখন আর ভালো লাগছে না। কারণ উনি যা যা করতে চেয়েছেন, যেভাবে করতে চেয়েছেন সেভাবে উনি পারছেন না বলে চলে যাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টাকে বাংলাদেশের জন্য বটবৃক্ষ উল্লেখ করে ডা. জাহেদ বলেন, ড. ইউনূস একটা বিরাট বটবৃক্ষের মতো। ছায়া আমাদের অনেক ঝুঁকি থেকে উনি বাঁচিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে ডেকে পরস্পরের মধ্যে সংঘাতের বীজ রোপন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টাকে অন্তত নির্বাচন দিয়ে তারপর সরে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।
এ সময় ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বের সেরা কমিউনিকেটর আখ্যা দিয়ে ডা. জাহেদ বলেন, তার মতো কমিউনিকেটর আমার জীবনে দেখি নাই। এতো সহজে চমৎকারভাবে মানুষকে আপন করে নেয়া, মুহূর্তের মধ্যে অতি পরিচিতর মত হওয়া, উনি কেন এ কমিউনিকেটগুলো করছে না? সবার সামনে সব দলকে ডাকুক, চিন্ময়ের ঘটনার পর যেভাবে ডেকেছিল। ক্লোজড অনেক প্রতিনিধি না হয়, একজন করে ডাকুক। দরকার হয় টপ একটা ক্লোজ ছোট গ্রুপে উনি কথা বলুক। কষ্টের কথা বলুন, দুঃখের কথা বলুন, চাওয়ার কথা বলুন, সবাইকে নিয়ে মিটমাট করানোর কথা বলুন।
ডা. জাহেদের মতে, এ জাহাজ (বাংলাদেশ) যদি ডোবে উনি (ড. ইউনূস) সহ ডুববেন, উনাকেসহ ডুবতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ড. ইউনূস এ জাহাজের ক্যাপ্টেনসি যদি ধরে রাখেন, আমরা অন্তত মোটামুটি একটা জায়গায় যেতে পারব। জাহাজটা অন্তত ডুববে না। ডক্টর ইউনুস কোনোভাবেই পদত্যাগ করতে পারেন না। এটা অন্যায় হবে, অনৈতিক হবে, ভীষণ অনৈতিক হবে।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।