Apan Desh | আপন দেশ

খুবি ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বাধা গল্লামারী মৎস্য খামার

খুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ৮ আগস্ট ২০২৫

খুবি ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বাধা গল্লামারী মৎস্য খামার

ছবি: আপন দেশ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে পরিচিত। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দেশ-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ভূমি সংকট। যা শিক্ষার্থী আবাসনের তীব্র ঘাটতি সৃষ্টি করেছে। এ সংকট নিরসনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের  গল্লামারী মৎস্য খামার।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। কিন্তু সে তুলনায় হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। আবাসন সুবিধা পান মাত্র ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হলের সংখ্যা কম হওয়ায় আবাসন সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ভূমির পরিমাণ প্রয়োজনীয় ভূমির মাত্র এক-পঞ্চমাংশ। চলমান প্রকল্পসমূহের কারণে ভূমি ও হল সংকট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট ও জীব বিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনসমূহের মাঠ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় জমি না থাকায় সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। জায়গা সঙ্কটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের দাবি ও প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে তৎকালীন সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণের নিমিত্তে ০৩ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের দাবিতে প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

পরে ০৬ নভেম্বর প্রশাসনিক ভবনের সামনে জমি অধিগ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে অবস্থিত মৎস্য অধিদফতরের গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি অবিলম্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তরের দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ও ভূমি সংকটের গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

মৎস্য খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তরের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছরের ০৭ নভেম্বর সচিবদের মৌখিকভাবে অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে ওই বছরের ০৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি পত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়।

আরওপড়ুন<<>>‘‌জুলাই ঘোষণাপত্রে একটি দলের চেতনা প্রকাশ পেয়েছে’

এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম শিক্ষা উপদেষ্টা ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তখন তারা বিষয়টি নিয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে কোনো সুরাহা না হওয়ায় গত ০৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা আবারও প্রধান ফটকে মানববন্ধন করেন এবং খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।

সর্বশেষ গত ০৯ মার্চ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ‘শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ উদ্বোধন শেষে শিক্ষার্থীদের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার অধিগ্রহণের দাবিকে ‘মীর মুগ্ধ’-এর দাবি হিসেবে অভিহিত করেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ১৪ মার্চ উপাচার্য পুনরায় শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানিয়ে খামার হস্তান্তরের যৌক্তিকতা  তুলে ধরেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গল্লামারী মৎস্য খামারটি খুবির সীমানার ভেতরে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে অবস্থান করছে। যা নিরাপত্তা, অবকাঠামোগত পরিকল্পনা ও কেন্দ্রীয় এলাকার সংযোগে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। ১০.৩৫ একর জমি হস্তান্তর করা গেলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা সম্প্রসারণ,সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তা জোরদার,প্রাকৃতিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন,গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ সম্ভব হবে। বিশেষ করে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিন এ জমি পেলে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পরিণত হতে পারবে। যা দেশের মৎস্য গবেষণা ও উৎপাদনে বড় অবদান রাখবে।

গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার সময় ময়ূর নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব ছিল, যা এর জন্য উপযোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এবং রূপসা নদীর সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এ সুবিধা আর নেই। তাই জোয়ার-ভাটা সম্পন্ন নদীর পাশে নতুন স্থানে খামার স্থানান্তর করাই যৌক্তিক।

এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জমি সংকটের কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণ ও গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ পরিস্থিতিতে খামারের জমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা গেলে এটি বর্তমান সংকট নিরসনে এবং শিক্ষার্থীদের দাবির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

আপন দেশ/এমএইচ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়