
ছবি: আপন দেশ
বাংলা ও ফারসি সাহিত্যের দুই বড় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও হাফিজ সিরাজি। একজন বাংলাদেশের জাতীয় কবি, অন্যজন ফারসি সাহিত্যের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও গজলকার। তাদের কবিতায় যে মানবতার কথা বলা হয়েছে, সে বিষয় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা ১১ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে নজরুল ও হাফিজের সাহিত্যে মানবতা শীর্ষক এ সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
মহাকালের দুই শিল্পী নজরুল ও হাফিজ। দুই ভাষার দুই কালের মহান দিকপাল এ দুই কবি। ভৌগোলিক দূরত্ব হাজার হাজর মাইলের হলেও তাদের চিন্ত ভাবনায় রয়েছে অনেক মিল। দুজনের কলমই ক্ষুরধার ছিলো অন্যায় ও নিপীড়নের বিপরীতে। মানুষের উপরে জুলুম- নিপীড়নের চিত্র দেখে নজরুল হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী অন্য দিকে। অন্যদিকে হাফিজের গজল খুঁজে ফেরে মনের কথা।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, মানবতার কবিতা লেখার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম অন্যতম। তার কবিতায় প্রকৃতি থেকে মানবতা বেশি স্থান পেয়েছে তারে লেখা স্থান পেয়েছে মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম আমি মনে করি কাজী নজরুলের মত আর কোন কবি পৃথিবীতে নেই।
আরও পড়ুন>>>শিক্ষার্থীদের জন্য সময় ব্যবস্থাপনা: সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি
সেমিনারে উপস্থিত প্রধান অতিথি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে যুগান্তকারী সাহিত্যিক কাজ করেন, ইতিহাসে তারা নানা উপাধিতে ভূষিত হন। নজরুল ও হাফিজ তেমনই দুই মহান সাহিত্যিক। হাফিজের গজল ও কবিতা ফারসি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। একইভাবে নজরুল ইসলামের লেখনী বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাদের কাব্যিক সৃষ্টিশীলতা, চিন্তাশক্তি ও মানবতাবোধ আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। নজরুল তার লেখায় যেমন সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, তেমনি হাফিজের গজলে প্রতিফলিত হয়েছে মানুষের মনের গভীর অনুভব।
তিনি আরও বলেন, নজরুল ছিলেন হাফিজ দ্বারা প্রভাবিত, বিশেষ করে মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণে। এ দুই কবিই ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও সৃষ্টিশীল। যারা তাদের সাহিত্যে মানুষ ও মানবতাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত ইরানি রাষ্ট্রদূত মনসুর চাভসি। তিনি বলেন, ইরানী সাহিত্যের ভিতরে সবচেয়ে বেশি মানুষের জীবনের জয়গানের কথা আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষ ও মানুষের চিন্তাধারায় নজরুল ও হাফিজের প্রভাবটা লক্ষ করা যায়। নজরুল ও হাফিজের লেখায় মানুষের মর্যাদা সর্বোচ্চ করা হয়েছে। মূলত তাদের কথাগুলো কেন্দ্রীভূত হয়েছে মানুষের জীবনকে ঘিরেই। কবিতা মানুষকে সত্যের পথে ধাবিত করে ন্যায়ের পথে ধাবিত করে। হাফিজের মতো। একইভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল মানুষের মুল্যবোধ, মর্যাদা ও তাদের চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তাদের সাহিত্যকর্মগুলো আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বিবেচিত।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাইন উদ্দীন, কলা অনুষদের সাবেক ডিন ড. বেলাল হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইন্সটিটিউটের কবি ও সাহিত্যিক মো.লতিফুল ইসলাম শিবলী। এছাড়াও আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ইসমাঈল সাদেঘি। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. শফিউল্লাহ।
এছাড়াও সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।