সংগৃহীত ছবি
ফেনীর বেশির ভাগ মানুষ টানা ছয় দিন পানিবন্দী। ত্রাণ নিয়ে সারা দেশ থেকে মানুষ আসছেন ফেনীতে। কিন্তু বিতরণে সমন্বয় না থাকায় খাবার পৌঁছাচ্ছে না গ্রামের ভেতর। ফলে কষ্টে আছেন তারা। দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।
রোববার বেলা ১টার দিকে ফেনী শহরে সদর হাসপাতাল মোড়ে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন মোহাম্মদ সোলাইমান পরশুরাম থেকে শহরে এসেছেন মেয়ে ও ছেলের খবর নিতে। তিনি জানান, তাদের বাড়ির একতলা পানির নিচে ছিল। তারা ছাড়াও সাত-আটটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথম দু-এক দিন রান্না করে খেয়েছেন। পরে রান্না করতে পারেননি।
চিড়া-মুড়ি খেয়েছেন। ত্রাণ বিতরণকারী কাউকে দেখেননি। এখন পানি কমায় নৌকা, ট্রাক এবং হেঁটে শহরে এসেছেন সন্তানদের দেখতে।
ফুলগাজী থেকে শহরে আসা আসাদুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ দিতে দেখেছি। কিন্তু প্রশাসনের কাউকে চোখে পড়েনি। ছাত্ররা বিভিন্ন জেলা থেকে ত্রাণ আনলেও তা গ্রামের ভেতরের মানুষ পায় না। সবাই রাস্তার আশপাশে ত্রাণ দেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক-পিকআপে ত্রাণ নিয়ে ফেনী আসছেন মানুষ। তাদের কেউ কেউ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কাছে ত্রাণ হস্তান্তর করছেন। তবে বেশির ভাগ নিজেরা দেয়ার চেষ্টা করছেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত পানি বেশি থাকায় ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের অনেক জায়গায় নৌকায় করে ত্রাণ দেয়া হয়। পানি কমায় নৌকায় করে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হয়নি। অনেকে পিকআপ, রিকশাভ্যানে করে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দেন। নৌকা না থাকায় একাধিক ট্রাককে ত্রাণ না দিয়ে ফেরত যেতে দেখা যায়।
শহরের সালাহউদ্দিন স্কুল মোড় থেকে হেঁটে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থান থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ এলাকায় কোমরপানি। আরও কয়েকটি স্থানে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কম পানি ছিল। সদর হাসপাতাল মোড় থেকে টেকনিক্যাল হয়ে ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী সড়কে বেলা ১১টায়ও ছিল কোমরপানি। এ প্রতিবেদক ফুলগাজী যেতে একাধিক ট্রাক ও পিকআপের চালককে অনুরোধ করলেও তারা অপারগতা জানান।
সদর হাসপাতালের মোড়ের কাছে পাঁচ-ছয়জন মহিলা বলেন, রাস্তার আশপাশের বাড়িতে ত্রাণ দেয়া হলেও গ্রামের ভেতরে কেউ যাচ্ছেন না। কয়েক দিনে সরকারের কেউ তাদের খোঁজ নেননি। শনিবার ফেনীর জেলা প্রশাসন ১ হাজার ৬০০ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেয়ার কথা জানান স্থানীয় সাংবাদিকদের।
বন্যার পানি ওঠায় চিকিৎসাসেবা তেমন মিলছে না। জেলা শহরে ৫০টির বেশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও দু-তিনটি ছাড়া বাকিগুলোতে সেবা বন্ধ। বেশির ভাগ হাসপাতালের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে। সদর হাসপাতালের নিচতলা গত বুধবার থেকে পানির নিচে ছিল। গতকাল পানি কিছুটা কমেছে। ওই হাসপাতালে কয়েক দিন মাত্র দু–তিনজন চিকিৎসকসেবা দিয়েছেন। তবে নার্সরা সার্বক্ষণিক ছিলেন। পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। রান্নাঘরে পানি ওঠায় রোগী ও স্বজনদের খেতে হচ্ছে শুকনো খাবার। কেউ কেউ রোগীদেরও ত্রাণ দিয়েছেন।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































