Apan Desh | আপন দেশ

‘দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে ৩ পরাশক্তি’

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ৭ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৯:৩৯, ৭ অক্টোবর ২০২৫

‘দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে ৩ পরাশক্তি’

সালাহউদ্দিন আহমদ।

দেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য এখন তিনটি পরাশক্তি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

মঙ্গলবার (০ে৭ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদল আয়োজিত আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বললেই জীবন দিতে হতো। আবরার ফাহাদের জীবন নেয়ার মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল, যাতে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা না বলে।
 
তিনি আরও বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এখন তিনটি পরাশক্তি আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করছে। এরমধ্যে দুটি আঞ্চলিক শক্তি ও একটি বিশ্ব মোড়ল।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, বরং নির্বাচন বিলম্বিত করার তৎপরতাই দেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। যারা বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচন পেছাতে চায় অথবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের কাজকেই তিনি মূল বাধা হিসেবে দেখছেন।

আরও পড়ুন>>>‘মৃত্যু ছাড়া কিছু উপদেষ্টার কোনো সেফ এক্সিট নেই’

সালাহ উদ্দিন আহমদবলেন, নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ না, যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় বিভিন্ন কায়দা কানুনার মধ্য দিয়ে সেটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে আলোচনায় ও রাস্তায় একই ইস্যুতে আন্দোলন করে যারা একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় জাতির মধ্যে সেগুলোই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ।

তিনি আরও বলেন, যারা পিআর পিআর করে জনগণকে বা বাংলাদেশকে একটা অস্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যেতে চাই সেগুলো হচ্ছে চ্যালেঞ্জ।

গণভোট আয়োজনের আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, গণভোটের জন্য যে আইনি বিধানগুলো করা দরকার, তা সংবিধানকে স্পর্শ করবে না। সংবিধানের যেসব আর্টিকেল পরিবর্তন বা সংশোধন হলে গণভোটের বাধ্যবাধকতা আছে, তা আর্টিকেল ১৪২-এ নির্ধারিত। সে সংশোধনীটা যখন হবে তখন তার পরবর্তী বিষয় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের জন্য সে জায়গাতে আমরা এখন আসি নাই।

সালাহ উদ্দিন আহমদ দাবি করেন, সংবিধানে এমন কোনো বিধান নেই যে অন্যান্য জাতীয় ইস্যুতে গণভোট করা যাবে না। তিনি পরামর্শ দেন, সরকার অধ্যাদেশ জারি করে অথবা আরপিওতে সংশোধন এনে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই এ গণভোট করতে পারবে।

তিনি জানান, একই দিনে নির্বাচনের সুবিধা হলো—একই আয়োজন, একই অর্থ ব্যয় ও একই লজিস্টিক ব্যবহার করা যাবে। একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য 'দুই ব্যালেটে নির্বাচন' প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, এতে জনগণের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, এইটা কী রকম প্রশ্ন আমি বুঝলাম না? এখন তো আমরা তিনটা ব্যালেটে ভর্তিতে অভ্যস্ত। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে জনগণ একাধিক ব্যালেটে ভোট দিয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, গণভোটের জন্য জনগণ প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশন প্রচারণার মাধ্যমে খুব সহজে জনগণকে বুঝিয়ে দিতে পারে। যেমন—লাল চিহ্নে টিক দিলে 'না' এবং গ্রিন চিহ্নে টিক দিলে 'হ্যাঁ' এমন সহজ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা সিম্পলের দিকে যাব এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। যারা এটাকে জটিল করতে চাচ্ছে তাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত নসিব করুন।

নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে জনগণকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত উপাদানগুলো হলো—জনগণ, ভোটার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলসমূহ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বর্তমান পুলিশের অবস্থা নিয়ে সবাই সন্দেহ পোষণ করে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তায় এ সমস্যা দূর হতে পারে।

তিনি বলেন, জনগণ এবার এতো বেশি উদগ্রিব হয়ে আছে, উন্মুখ হয়ে আছে একটা সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য তারাই মূল ভূমিকা পালন করবে জনগণ। এখানে কেউ অনিয়ম করার চেষ্টা করলে জনগণ পাহারা দিবে।

সালাহ উদ্দিন আহমদ 'ফ্যাসিবাদী বিরোধী জাতীয় ঐক্য' শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমরা যদি এ ফ্যাসিবাদী বিরোধী জাতীয় ঐক্যটা শক্তিশালী করি সমুন্নত রাখি ও এ গণতান্ত্রিক শক্তিটাকে আমরা সম্মান করি... ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফেসিতে কোন উৎপাদ এবং উৎপত্তিই হবে না।

তিনি এ ঐক্যকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন ও সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলার আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইলে ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর বিচারিক ব্যবস্থা তরান্বিত করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের উদ্যোগী হওয়া উচিত।

হাসিনার মতো একটি লেজুড়বৃত্তি নেতার কারণে পরাশক্তির দেশ রাজনৈতিক হেজিমনি ও আগ্রাসন চালাতে পেরেছে উল্লেখ করে বিবএনপির এ নেতা বলেন, দেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হলে ভালো উদাহরণ দরকার। মেধা, সততা ও ভালো নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতির মাঠে প্রতিযোগিতা করা দরকার।
 
এ সময় ছাত্রদলের নেতারা বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সময় গুপ্তভাবে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিল একটি সংগঠন। আর সে মামলায় হত্যাকারীদের ফাঁসি থেকে রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে জামায়াত নেতা শিশির মনির। যুগে যুগে গুপ্ত সংগঠনের এসব কার্যক্রম সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরবে ছাত্রদল।
 
প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ছাত্রলীগ দ্বারা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।

আপন দেশ/এমবি
 

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়