
ফাইল ছবি
হাঁটা হল ওজন কমানোর একটি সহজ ও কার্যকর মাধ্যম। তবে আপনি দিনের কোন সময়টিতে হাঁটছেন, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে ফলাফল। সকাল ও সন্ধ্যা– এ দুই সময়ই হাঁটার অলাদা আলাদা উপকারিতা আছে। সে সঙ্গে আছে সতর্ক হওয়ার বিষয়। তাই আপনার হাঁটার সর্বোত্তম সময় নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্য, শারীরিক সমস্যা, ব্যক্তিগত রুটিন, পছন্দ ও লক্ষ্যের উপর। তাই আপনার জন্য হাঁটার শ্রেষ্ঠ সময়টি বেঁছে নিতে জেনে নিন কয়েকটি বিষয়-
আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথায় ভোগা ব্যক্তিদের সকালের বদলে সন্ধ্যায় হাঁটা ভালো, কারণ সকালে জয়েন্টে জড়তা বেশি থাকে। অনিদ্রার সমস্যা যাদের আছে, তাদের জন্য সন্ধ্যায় হাঁটা উপকারী। এতে ঘুমের মান উন্নত হবে। তবে রাতের দিকে খুব দেরি করে না হাঁটাই ভালো। অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের রোগীর ভারী খাবারের পরেই না হেঁটে ৩০ মিনিট পর হাঁটা উচিত। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটলে বদহজম হতে পারে।
আবার হৃদরোগী বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ভোরে হাঁটা উপকারী। আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝে সঠিক সময়টি বেছে নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। তবে আপনার যদি এমন কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে, তাহলে আপনি বিভিন্ন সময়ে হাঁটার উপকারিতার ভিত্তিতে সময় নির্ধারণ করতে পারেন-
১. সকালের হাঁটা মেটাবলিজম বাড়ায়
সকালে দ্রুত হাঁটার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করলে আপনার মেটাবলিজম সক্রিয় হয়, যা সারাদিন ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। খালি পেটে ব্যায়াম করলে শরীর সঞ্চিত ফ্যাট শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
২. সন্ধ্যায় হাঁটলে খাবার ভালো হজম হয়
রাতের খাবারের পরে হালকা হাঁটা হজমশক্তি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রাতের অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রবণতা কমাতে পারে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কাজে আসে।
৩. মন ভালো করার হরমোনের মাত্রা বাড়ে সকালের হাঁটাহাঁটিতে
সকালে হাঁটলে শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের মাত্রা বাড়ে। এন্ডোরফিন শরীরে ব্যথার সংকেত কমাতে সাহায্য করে; এটি কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) এর মাত্রা কমায়, ফলে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমে। এটি মুড বুস্টার হিসেবেও কাজ করে।
৪. ঘুমের উন্নতি করে সন্ধ্যার হাঁটা
ব্যস্ত দিনের পরে সন্ধ্যায় হাঁটা স্ট্রেস কমানোর একটি ভালো উপায় হতে পারে। রাতের খাবারের পর হাঁটলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমে। এতে শরীর ও মন রিল্যাক্স বোধ করে ও ভালো ঘুম হয়।
৫. সকালের হাঁটার অভ্যাস ধরে রাখা সহজ
সকালে হাঁটার অভ্যাস থাকলে রোজ ঘুম থেকে উঠে আপনি এভাবেই দিন শুরু করতে পারবেন। কিন্তু বিকেল বা সন্ধ্যায় একেদিন একক রকম কাজ থাকতে পারে। এতে দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাস করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
৬. সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সন্ধ্যার হাঁটা
সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে হাঁটতে বের হলে বন্ধু, স্থানীয় হাঁটার গ্রুপ, ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ বাড়ে। ডিজিটাল যোগাযোগের এ যুগে এটি অত্যন্ত জরুরি।
৭. সকালে হাঁটা ভিটামিন-ডি পেতে সাহায্য করে
সকালে হাঁটার আদর্শ সময় সাধারণত সূর্যোদয়ের পরপরই, যখন তাপমাত্রা কম ও পরিবেশ শান্ত থাকে। তবে তাপ কম থাকলেও সূর্য তো থাকে, যা ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস। অন্যদিকে, যাদের সূর্যলোকে সমস্যা হয়, তারা তো রাতে হাঁটতে পারছেন।
৮. ব্যক্তিগত পছন্দ ও লাইফস্টাইল
হাঁটার সেরা সময় নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ ও দৈনন্দিন রুটিনের উপর। এমন একটি সময় বেছে নিন, যখন আপনি সবচেয়ে আরামদায়ক ও অনুপ্রাণিত বোধ করেন।
৯. অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনমতো সমন্বয়
নিয়মিত আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করুন। সেজন্য স্মার্ট ওয়াচ বা মোবাইল অ্যাপও ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি সঠিক পথে আছেন কি না। সে সঙ্গে নিয়মিত ওজন দেখতে পারেন।
১০. ভালো ফলাফলের জন্য উভয়ই করুন
সম্ভব হলে সকাল ও সন্ধ্যা উভয় সময় হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন। দুটি সময়ে হাঁটারই আলাদা উপকার আছে। আর আপনার শরীর যদি নিতে পারে, তাহলে একেক দিন একেক বেলা বা প্রতিদিন দুইবেলা করেও হাঁটতে পারেন।
আপনি সকালে হাঁটুন বা সন্ধ্যায়, নিয়মিত হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও সুষম খাদ্য ওজন কমানো এবং সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের প্রথম শর্ত। মনে রাখবেন, হাঁটার সেরা সময় হল যে সময়টি আপনার লাইফস্টাইলের সঙ্গে খাপ খায় ও নিয়মিত রুটিন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আপন দেশ/এমবি