Apan Desh | আপন দেশ

এক মাস রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে যে পরিবর্তন ঘটবে

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২০ জুলাই ২০২৫

এক মাস রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে যে পরিবর্তন ঘটবে

ফাইল ছবি

ব্যায়ামের জন্য রোজ একটা ঘণ্টা সময় বের করা কঠিন বটে। তবে হালকা বা মাঝারি ব্যায়াম হিসেবে হাঁটাহাঁটি বেশ ভালো। এক ঘণ্টা দৌড়ানো বা ভারী ব্যায়াম করার চেয়ে হাঁটা অনেকটাই সহজ। এমনকি জয়েন্টে ব্যথার মতো সমস্যা থাকলেও আপনি নিয়মিত হাঁটতে পারবেন। আর তাতে উপকারও মিলবে। আদতে রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলে এক মাসে দেহে কী ধরনের পরিবর্তন আসে, জেনে নেয়া যাক।

এক ঘণ্টা হাঁটলে বেশ কিছু ক্যালরি খরচ হয়। তার মানে হেঁটে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আপনি। কমবে শরীরের বাড়তি মেদ। শরীর তো সুস্থ থাকবেই, মনের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এ চর্চায়। জীবনধারা হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।

পেশি ও হাড় হবে দৃঢ়

এক মাস যদি আপনি এক ঘণ্টা করে হাঁটেন, তাহলে আপনার পায়ের পেশি পাবে দৃঢ়তা। পায়ের হাড় হয়ে উঠবে মজবুত। হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি কমবে। দেহের ভারসাম্য রাখার ক্ষমতা বাড়বে। ধীরে ধীরে হাঁটার গতিও বাড়াতে পারবেন। হাঁটতে হাঁটতেই ট্রেকিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর কোনো কাজের জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।

ভালো ঘুম, প্রফুল্ল মন

নিয়ম করে হাঁটলে রাতে আপনার ভালো ঘুম হবে। তবে সন্ধ্যার পর দ্রুত বা মাঝারি গতিতে না হাঁটাই ভালো। তাতে আবার রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। হাঁটলে ভালো লাগার হরমোনও নিঃসৃত হয়। তাই নিয়মিত হাঁটলে মনও ভালো থাকবে। কাজকর্মে উদ্দীপনা পাবেন। ইতিবাচক অনুভব করবেন। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা কমবে। নিয়ম করে হাঁটতে পারলে লক্ষ্যপূরণের একটা আনন্দও অনুভব করবেন।

হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা

হাঁটলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে। তবে সে জন্য সপ্তাহে অন্তত দেড় শ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটতে হয়। রোজ এক ঘণ্টা হাঁটলেও আপনার হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমবে। খেয়াল রাখবেন, পুরো সপ্তাহের ৪২০ মিনিটের মধ্যে অন্তত ১৫০ মিনিট যেন মাঝারি গতিতে হাঁটা হয়। মাঝারি গতিতে হাঁটার অর্থ হলো, এভাবে হাঁটার সময় আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বাড়বে। এ সময় আপনি কথা বলতে পারবেন, কিন্তু সুরেলা কণ্ঠে কিছু বলতে পারবেন না। মাঝারি গতিতে হাঁটার মোট সময়টা সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের বেশি হলে আরও ভালো। বাকি সময় কিছুটা কম গতিতে হাঁটলেও ক্ষতি নেই। মনে রাখবেন, হৃৎপিণ্ডের গতি এভাবে বাড়তে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি ভারী কাজ বা ভারী ব্যায়াম করার জন্যও শরীরকে উপযোগী করে তুলছেন।

স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা

রোজ এক ঘণ্টা সময় হাঁটতে হলে আপনাকে বাকি ২৩ ঘণ্টাও কিছুটা শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। নইলে নিয়ম করে রোজই আপনি এতটা সময় হাঁটতে মুশকিলে পড়বেন। রোজ এতটা সময় হাঁটতে গিয়েই একটা স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেন আপনি। সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া, সময়মতো ঘুম থেকে ওঠার একটা অভ্যাস গড়ে তোলা সহজ হতে পারে। কষ্ট করে সময় বের করে হাঁটছেন, ক্যালরি পোড়াচ্ছেন—এ ভাবনা আপনার খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও পরোক্ষভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

খেয়াল রাখুন

হাঁটলে কতটা ক্যালরি পুড়বে, তা নির্ভর করছে আপনি কেমন গতিতে হাঁটছেন ও কতটা সময় ধরে হাঁটছেন তার ওপর। আপনি কত ওজন নিয়ে হাঁটছেন, তা–ও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৮০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি এক ঘণ্টায় যতটা ক্যালরি পোড়াতে পারেন, ৬০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি একই সময় একই গতিতে হেঁটেও ক্যালরি পোড়াতে পারবেন তার চেয়ে কিছুটা কম। তাই এক ঘণ্টা হাঁটার সময়ের মধ্যে কিছুটা সময় যদি কেউ বাড়তি ওজন বহন করে হাঁটেন, তাহলে কিছুটা বেশি ক্যালরি পোড়াতে পারবেন। হাঁটার জন্য ওজনদার ভেস্ট কিনতে পাওয়া যায়। বিকল্প হিসেবে ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়েও হাঁটতে পারেন। তবে এক ঘণ্টার পুরো সময়টাই এভাবে ওজন বহন না করলেও ক্ষতি নেই। যতটা সময় ওজন বহন করতে পারবেন, ততটাই লাভ।
তবে কেবল এক মাস হেঁটেই এ অভ্যাস ছেড়ে দিলে কিন্তু মুশকিল। হাঁটা ছেড়ে দিলে এক মাসের প্রাপ্তির প্রায় সবটাই হারিয়ে যাবে। সুস্থ থাকতে হাঁটার চর্চাটা ধরে রাখতে হবে সব সময়। হাঁটার একজন সঙ্গী থাকাটা হাঁটার অভ্যাস ধরে রাখতে আপনাকে সাহায্য করবে। হাঁটতে হাঁটতে আপনি পছন্দের অডিও শুনতে পারেন। পডকাস্ট শুনতে পারেন। তবে কোনো কিছু শুনতে শুনতে পথে হাঁটতে গিয়ে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। রোজ হাঁটার চ্যালেঞ্জটা ধরে রাখতে পারলে আপনি নিজেকে নানাভাবে পুরস্কৃতও করতে পারেন। এমন নানা উপায়ে হাঁটার উদ্যম ধরে রাখার চেষ্টা করুন।

আপনদেশ/এমবি

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়