
ছবি: আপন দেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) 'বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে দেন সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ঢাকা'র চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় পর্যটন অঞ্চল হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম তিনটি জেলায় বিভক্ত। জেলাগুলো হলো- খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান । পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতিহাসের পাতায় খুঁজলে আমরা একাধিক প্রাচীন জনপদের সন্ধান পাই। এর মধ্যে হরিকেল জনপদ অন্যতম, যা প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের আওতায় চলে আসে এ অঞ্চল। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম চলে যায় তৎকালীন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিতে।
এ ইতিহাস সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা চেয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হয়। তাই ওই সময়ে প্রতিবাদস্বরূপ 'ব্ল্যাক ডে' পালন করা হয়। পরবর্তীতে জিএসএস (জনসংহতি সমিতি) গঠিত হয় এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে। ১৯৭০-৮০ দশকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সদিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং নানা সুবিধা প্রদান করা শুরু হয়। তবে আজও এ অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে আলোচনা হয়। তারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কি না অথবা কতটুকু পাচ্ছে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ঠ সাংবাদিক ও গবেষক সরদার আবদুর রহমান। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যা দেশের মোট আয়তনের এক দশমাংশজুড়ে বিস্তৃত। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, খনিজ সম্পদ, কৃষি, পর্যটন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চলমান। ১৯৭৯-৮৯ সালে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংঘাতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় ইন্ধনে সৃষ্ট সংঘর্ষের পেছনে ছিল সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন ও বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিপ্রায়। ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র বিরতি হলেও এখনো জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফসহ সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয়। বাঙালি অধিকার খর্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হত্যার মাধ্যমে অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সংবিধানের আলোকে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শিক্ষাবিস্তার, সংলাপ ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় অবস্থান নিশ্চিত করাই পার্বত্য শান্তি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা এবং অশান্তির মূল কারণ হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক। এর অনেক প্রমাণ আজকের এ রুমেই রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পাহাড়ি ছাত্রছাত্রী রয়েছে। আমাদের উচিত ছিল, এ সেমিনারে তাদের কিছু বলার সুযোগ করে দেয়া। এখানে তাদের নিয়ে ওপেন ডিসকাশন হওয়া দরকার ছিল। কারণ বিষয়টাই হচ্ছে তাদের নিয়ে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে বসা হয়েছে, সে উদ্দেশ্যেই সমস্যা রয়েছে। আমরা তো তাদের কথাও শুনতে পারতাম, তাদের পরামর্শ সম্পর্কেও জানতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, আমরা যা বলি তাই ঠিক, তারা যা বলে সব ভুল এ মানসিকতা দিয়ে কখনোই কোনো সমাধানে আসা সম্ভব না। তাই আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে। যার যতটুকু স্টেজ, তাকে ততটুকু জায়গা দিতে হবে এবং সকলের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বাংলাদেশি, বাংলাদেশি হিসেবে যেসব অধিকার আমাদের আছে সেসব অধিকার সকল নাগরিকেরই রয়েছে।
এছাড়াও আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন মণ্ডল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শাহাব এনাম খান, রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবুল কাসেম, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী, রাবির বিশিষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম এবং ফোকলোর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।